বাবা দিবস _x

সাবধান! ফিরছে গুটি বসন্ত

তৈয়বুর রহমান : ঘাতক ব্যাধি গুটি বসন্ত নির্মূলের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। কিন্তু সাবধান, ফিরে আসতে পারে সেই রোগ।

 

সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে এক সময় গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে যাদের মৃত্যু ঘটেছে, তারা আর কখনোই ফিরে আসবে না। এটি যেমন ঠিক, তেমনি তাদের মুত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘটেনি সেই ভাইরাসের, এটিও তেমনি ঠিক। আসলে মাটির তলায় চাপা পড়লেও সুপ্ত অবস্থায় ছিল এতোদিন।

 

ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের পারমাফ্রস্ট সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার গলে থাকে। কিন্তু এ বছর এক মিটারেরও বেশী গলতে পারে বলে জানান পারমাফ্রস্ট স্টাডিজের ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক মিখাইল গ্রিগোরিয়েভ। এছাড়া বরফ গলায় বন্যা দেখা দিয়েছে ওই অঞ্চলে। এর ফলে বেরিয়ে আসতে পারে কলিমা নদীর তীরের কবরগুলো। সেই সঙ্গে ভেসে উঠতে পারে ভাইরাসও।

 

সায়েন্স একাডেমি সার্বিয়া শাখার কর্মকর্তা বরিস কারশেনগোল্ডস বলছেন, এই অঞ্চলে একটি শহর ছিল। ১৮৯০-এর দশকে গুটি বসন্ত মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে শহরটিতে। এতে মারা যায় শহরবাসীর ৪০ ভাগ।

 

এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো গুটি বসন্তকে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার মতে, এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বিশ্বের প্রায় ত্রিশ শতাংশ মানুষ। গুটি বসন্তের কয়েকটি উপসর্গের একটি প্রচণ্ড জ্বর।

 

গুটি বসন্তের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাশিয়ার উত্তর উপকূলে কাছাকাছি শহর সালেখার্দের একটি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন ২৪ ব্যক্তি। ধারণা করা হচ্ছে, তুন্দ্রা অঞ্চলে কবর থেকে এই গুটি বসন্তের ভাইরাস তাদের দেহে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে।

 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সার্বিয়ান টাইমসকে বলেছেন, এটি হচ্ছে একটি সতর্ক বার্তা। আরো ভয়বহ দিন আসতে পারে।

 

বরিস কারশেনগোল্ডস জানান, সেই সময় মানুষদের কবর দেয়া হয় কলিমা নদীর তীববর্তী অঞ্চলে মাটির উপড়ের স্তরে। ‘কিন্তু এখন এক শ’ বছরের সামান্য কিছু বেশি সময় পর বন্যার পানির তোড়ে কলিমা নদীর দুই তীরে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে,’ বললেন তিনি, ‘একই সঙ্গে ‘পারমাফ্রস্ট’ গলে যাওয়ায় তা নদী ভাঙ্গন প্রক্রিয়াকে কেবল দ্রুততরই করে তুলছে।’

   

সালেখার্দের কাছকাছি ইয়ামাল উপদ্বীপে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া যাওয়ায় নোভোসিবিরস্কের ভাইরোলোজি অ্যান্ড টেকনোলোজি সেন্টারের সদস্যরা অন্য রোগের জীবাণু পাওয়া যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন। এরই মধ্যে তারা বেশ কিছু মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছেন, সেগুলো এখনো গুটি বসন্তের দাগ বহন করছে বলে তারা ধারণা করছেন।

 

বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো ভাইরাস খুঁজে পাননি। দেহাবশেষগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় বিশেষজ্ঞদের সবাই রোগ প্রতিরোধক পোশাক পড়েছিলেন।

 

মিখাইল গ্রিগোরিয়েভ সার্বিয়ান টাইমসকে বলেন, ‘ইয়ামাল উপদ্বীপের মাটি ও পাথরে প্রচুর বরফ রয়েছে। পানি বেরিয়ে এসে দ্রুত মাটিকে নরম করে ফেলতে পারে। সে সময় বেরিয়ে আসতে পারে গুটি বসন্তের ভাইরাস। কিছু কিছু মৃতদেহ মাত্র তিন মিটার গভীরে কবর দেয়া হয়েছে। কবরে মাটি দেয়া হয়েছে খুবই অল্প। এরফলে এই জীবাণু ভেসে উঠতে পারে ভূপৃষ্ঠে।

 

এছাড়া আরেকটি আশঙ্কার কথা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। পারমাফ্রস্ট মিথেন গ্যাসও নির্গত করতে পারে। এক্ষেত্রে আবহাওয়া বায়ুম-লীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ব্যাপকভাবে গ্রিনহাউসের প্রভাব পড়বে। এতে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাবে বৈশ্বির উষ্ণতা।

   

রাইজিংবিডি/১৭ আগস্ট ২০১৬/তৈয়বুর রহমান/শাহনেওয়াজ