সাতসতেরো

অচেনা লোকটার ডাকে সন্দেহ হলো

রণজিৎ সরকার : মার্কেট থেকে বের হয়েছি কেনাকাটা করে। আমার হাতে বেশ কয়েকেটি ব্যাগ। নতুন পোশাকের ব্যাগ। কিছু দূরে যাওয়ার পর গাড়িতে উঠব। হেঁটে যাচ্ছি। পেছন থেকে কে যেন বলল, ‘ব্যাগওয়ালা ভাই, ও ব্যাগওয়ালা ভাই।’

 

ডাকটা শুনতে পেলাম আমি। ভাবলাম, আমার মতো তো অনেকেই মার্কেট থেকে বের হয়েছে। তাদের হাতে ব্যাগ আছে। তারা আমার পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে।

 

পেছন তাকালাম না। হেঁটে যাচ্ছি। আবারও ডাক, ‘ও ব্যাগওয়ালা ভাই, ব্যাগওয়ালা ভাই, একটু দাঁড়ান।’

 

এবারও পেছনে তাকালাম না। ভাবছি, ঈদে সামনে। কত রকমের ধান্দাবাজ আছে রাস্তায়। রাস্তাঘাটে কখন কোন বিপদে পড়ে নিজের সর্বস্ব হারাতে হয় কে জানে। নানা কিছু ভাবতে ভাবতে পেছনে না তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছি।

 

এবার পেছনে থেকে ডাক দিল, ‘কালো শার্ট পরা ব্যাগওয়ালা ভাই।’

 

আমার পরনে কালো শার্ট। এবার নিশ্চিত হলাম। লোকটা আমাকেই ডাকছে। আবার ভাবছি, লোকটাযদি আমার পরিচিত হতো, তাহলে তো আমার নাম ধরে ডাকত। লোকটা নিশ্চয় আমার পরিচিত না। অচেনা লোকটার ডাকে সন্দেহ হলো আমার। তার ডাকে আমার সাড়া দেওয়ার দরকার নেই।  এতে আবার কোন বিপদে জড়িয়ে পড়ি, কে জানে!

 

ডান হাত দিয়ে আমার প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করলাম। আমার বন্ধু নাজুকে কল দিলাম। পেছনের লোকটাকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে আমি ব্যস্ত আছি।

 

লোকটা আবার বলল, ‘এই যে ভাই, একটু দাঁড়ান। মোবাইলে কথা পড়ে বলেন। আপনার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।’

 

আমি তার কথা না শোনার ভান করে মোবাইলে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছি। সামনে একটা ভিক্ষুক।  ভিক্ষুকটা আমার সামনে তার ডান হাতটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘মামা, ঈদের মার্কেট করছেন, আমাকে কিছু টেহা দেন, আমিও ঈদের মার্কেট করুম।’

 

ভিক্ষুকটার কথা শোনার পর টাকা দিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত ১০ টাকার একটা নোট। ভিক্ষুকটা টাকা পেয়ে মুচকি হাসি দিল। বুঝতে পারলাম, ঈদ উপলক্ষে তার আয় বেশ ভালোই হচ্ছে। আমার ১০ টাকা পেয়ে সে আরো বেশি খুশি হয়েছে।

 

হঠাৎ আমার বন্ধু মাছুমের সঙ্গে দেখা। মাছুম বলল, ‘কি রে, তুই এখানে?’মার্কেটে গিয়েছিলাম। তুই?‘আমিও তো মার্কেটে যাব।’আচ্ছা, তুই একটু দাঁড়া। ‘কেন?’

 

মাছুমের কানের কাছে আমার মুখ নিয়ে বললাম, আমাকে পেছনে একটা লোক আসছে। সে অনেকক্ষণ ধরে ডাকছে আমাকে। কিন্তু আমি তো তাকে চিনি না। বিপদের ভয়ে তার ডাকে সাড়া দিচ্ছি না। ভয়ও করছে আমার। লোকটা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আমার পেছন নিয়েছে হয়তো। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।’

 

মাছুম ধীরে ধীরে বলল, ‘ঠিক আছে সাজু। তুই কোনো চিন্তা করিস না। আমি আছি। দেখি, লোকটা কী বলে।’

 

পেছনে তাকালাম। লোকটা হাত ওঠাল। লোকটার দেখার পর বুঝতে পারলাম। সে অনেক স্মার্ট। খারাপ লোক হবে না নিশ্চয়। তবু সন্দেহ হলো। কারণ মানুষের চেহারা দেখে তো বোঝা যায় না। লোকটা কাছে চলে এল। হাত এগিয়ে দিল। আমিও ভয়ে ভয়ে সৌজন্যের খাতিরে এগিয়ে দিলাম হাত।

 

ভাবলাম, লোকটা হয়তো আমাকে বলবে, আপনি কি কানে কম শোনেন? কিন্তু না। লোকটা আমাকে সে কথা না বলে বলল, ‘আপনি কি আমাকে চিনেছেন?’আমি বললাম, না তো!‘না চেনারই কথা।’কারণ কী, বলেন তো?‘কারণ তো আপনি নিজেই জানেন।’আপনার কোনো কথাই বুঝতে পারছি না। আমি জানি, মানে!‘অবশ্যই আপনি জানেন।’বন্ধু মাছুম বলল, ‘ভাই, কারণটা আপনি বলেন।’‘আমাকে কী সন্দেহ হচ্ছে আপনাদের?’সন্দেহের কথা বলছি না। আপনি বিষয়টা খুলে বলেন।‘আচ্ছা, বলছি। আপনি তো ফেসবুক সেলিব্রিটি। আপনি একটা পোস্ট দিলে সে পোস্টে শত শত কমেন্ট, হাজার হাজার লাইক পড়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কি জানেন। আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড হতে পারলাম না।

 

রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি। অ্যাকসেপ্ট করেনি। ফলোওয়ার আছি।’

 

লোকটার কথা শুনে অবাক হলাম। বললাম, আপনি কী নামে ফেসবুকে আছেন?লোকটা বলল, ‘জাকির হোসেন।’একজনকে ডিলিট করে আপনাকে অ্যাকসেপ্ট করব।‘আমি আপনার ফেসবুক বন্ধু হয়ে ধন্য হব।’কী যে বলেন। চলেন পাশের দোকানে বসে চা খাই।মাছুম বলল, ‘রমজান মাস, ভুলে গেছিস।’‘ঠিক আছে, অন্য দিন খাব।’লোকটা চলে গেল। মাছুম মার্কেটের দিকে গেল। হেঁটে যেতে লাগলাম আমিও।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৫/কমল কর্মকার