সাতসতেরো

সানি লিওন বাংলাদেশে আসার পর...

রণজিৎ সরকার : কয়েকদিন ধরে ভাবছি, তার কথাটা তোমাকে বলা দরকার। কথাটা শোনার পর তুমি যে আবার কী ভাব। সেজন্য কথাটা বলার চেষ্টা করেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছি, সাহসও পাচ্ছি না বলার।

 

তিতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আজাদ, আমার বান্ধবী রাইসার কথা বলবে নিশ্চয়ই। আমাকে আবার রাগানোর জন্য।’না, তিতি। তোমার বান্ধবী রাইসার কথা বলব না। ‘তাহলে কার কথা বলতে চায় তুমি?’যার কথা বলতে চাই, তাকে তুমি চেন, জানো, অন্যরাও চেনে, জানে।‘কে সে, নাম বলো তো তার?’

 

নাম বললেই তো চিনে যাবে। কিন্তু তার আগে বলো। তার কথা শোনার পর আমাকে কিন্তু বকা দিতে পারবে না। খারাপ বলতে পারবে না আমাকে।

 

তিতি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, ‘আজাদ, তোমাকে বকা দেব না। তবু কথাটা বলো তুমি।’বললাম, তিতি কথাটা হেঁটে হেঁটে না বলে, চলো কোথাও গিয়ে বসি, তারপর তোমাকে তার কথা বলি।‘রাস্তায় বললে সমস্যা হবে।’রাস্তার লোকজন যদি শুনে ফেলে, তাহলে খারাপ ভাববে আমাদের।‘আচ্ছা, কার কথা বলতে চাচ্ছ সত্যি করে বলো তো তার নাম?’বলব তো। চলো, নিরিবিলি কোথাও গিয়ে বসি দুজন। ‘ঢাকা শহরের নিরিবিলি জায়গা কোথায় পাবে?’চলো, রমনা পার্কের কোনো একপাশে গিয়ে বসি।‘আচ্ছা, চলো।’

 

আমার দুজন হেঁটে হেঁটে রমনা পার্কে গেলাম। ফাঁকা জায়গা খুঁজতে খুঁজতে উত্তর পাশে শানবাঁধানো একটা বেঞ্চে বসলাম দুজন। খুব কাছাকাছি।তিতি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে বলল, ‘এবার বলো।’আশপাশে কেউ নাই তো?‘না, শুভংকর নেই। আছে শুধু গাছ-আর ঘাস।’বাহ্। তুমি তো মীরাক্কেলের শুভংকর দার কথা মনে করে দিলে।

 

‘এসব কথা বাদ দিয়ে এবার তোমার আসল কথা বলো তো। না বললে কিন্তু আমি উঠে চলে যাব।’রাগ করো না তিতি। বলব বলেই তো এখানে এসেছি।‘তাহলে বলছ না কেন?’ভয় করছে!

 

‘ভয়ের কী হলো। আমি তোমাকে কিছু বলব না। বকা দেব না। এই আমি কান ধরলাম। আমাকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’

 

তিতির কান থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম, আমার চোখ ছুঁয়ে কথা দাও। তার কথা শোনার পর আমাকে বকা দেবে না। খারাপ ভাববে না।

 

তিতি সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখে তার হাত রেখে বলল, ‘তোমাকে বকা দেবে না। খারাপ ভাব না।’বললাম, কথা দিলে তো। কথা যদি অমান্য করো তাহলে কিন্তু আমার চোখ খারাপ হয়ে যাবে।‘আমি কি চাইব, আমার প্রিয় মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে যাক। তা কখনো চাইব না।’ধন্যবাদ তোমাকে।‘ধন্যবাদ দিয়ে লাভ নেই, আগে তার কথা বলো।’আচ্ছা, তার কথা বলার পর সহ্য করতে পারবে তো?

 

‘তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তুমি আমাদের বিচ্ছেদের কথা বলবে।’না না তিতি। সে প্রশ্নই আসে না। তোমার আমার সম্পর্ক চিরকাল অটুক থাকবে আশা করি।‘তাহলে বলো। আমি কিন্তু আর ধৈর্য ধরতে পারছি না। এখন কিন্তু মানুষ ডেকে তোমাকে গণপিটুনি দেব।’

 

না না তিতি, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গায় গণপিটুনিতে অনেক মানুষ মারা গেছে। আমাকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেল না! এই বলে মুচকি হেসে ফেললাম আমি।‘আজাদ, খুব বিরক্ত লাগছে কিন্তু। এখনো বলছি বলো?’আচ্ছা, তিতি তুমি কি জানো, বাংলাদেশে একজন অতিথি আসবেন?

 

‘বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত কত অতিথি আসেন। বাংলাদেশের আতিথেয়তা পাওয়ার জন্য। এবার আবার কে আসবেন? তাকে নিয়ে তোমার এত কৌতূহল কেন?’

 

তুমি তো তাহলে তো কিছুই জানো না দেখছি, শুধু কি আমার কৌতূহল। অসংখ্য তরুণ-যুবকদের মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

 

তিতি উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে বলল, ‘ঘটনা কী, তরুণ-যুবকদের মধ্যে কৌতূহল কেন? এমন কে আসবেন বাংলাদেশের যুবকদের মাতাতে?’

 

হ্যাঁ, এমন একজনই আসবেন সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় একটি কনসার্টে যোগ দেবেন। শুধু যোগ দেওয়াই নয়, সেই সঙ্গে রীতিমতো মঞ্চ মাতাবেন তিনি।‘কে সে? আজাদ, নাম বলো তার প্লিজ।’

 

তুমি কি তাকে বাস্তবে দেখতে চাও? যদি দেখতে চাও। তাহলে টিকিট কাটতে হবে। কনসার্টের টিকেটের দাম ন্যূনতম ধার্য করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আমি জানি তুমি তাকে কখনো দেখতে চাইবে না।‘কেন, চাইব না? আজাদ তার নামটা বলো প্লিজ।’তিতির কাছ থেকে একটু সরে গেলাম। তারপর বললাম, তিতি, রাগ করবে না, বকা দেবে না, খারাপ ভাববে না আমাকে। আমি তার নাম বলছি শোন।‘আচ্ছা, বলো।’সানি লিওন!

 

তিতি সনি লিওনের কথা শুনে মুচকি হেসে ফেলল। তারপর বলল, ‘সনি লিওনের কথা বলতে এত ভয় হচ্ছিল তোমার।’মাথা নিচু করে বললাম, হ্যাঁ।

 

তিতি স্বাভাবিকভাবে বসল। তারপর বলল, ‘আজাদ, ভয়ের কিছু নেই, কাছে এসে বসো।’ আমি তবু ভয়ে ভয়ে তিতির পাশে গিয়ে বসলাম। আমাদের বেঞ্চের অন্য পাশে এসে এক জুটি এসে বসল। তিতি আমার কানের কাছে তার মুখ নিয়ে ধীরে ধীরে বলল, ‘সানি লিওন বাংলাদেশে আসার পর যা হবে, তা তোমাকে পরে বলব। এখন বলা সম্ভব না, চলো উঠি। হলে ফিরতে হবে আমাকে।’আমরা উঠলাম। হেঁটে হেঁটে পার্কের ভেতর থেকে বের হয়ে তিতিকে বললাম, সানি লিওন বাংলাদেশে আসার পর যা হবে, তোমার কাছে থেকে শোনার অপেক্ষায় রইলাম। কখন বলবে?‘রাতে ফেসবুকে অথবা মোবাইল ফোনে কথা হবে।’ওকে।রিকশায় উঠে হলের দিকে চলে গেল তিতি।

  রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ আগস্ট ২০১৫/রণজিৎ/সনি