সাতসতেরো

পাহাড়ি বাজারগুলো যেমন হয়

ফেরদৌস জামান : পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে প্রতিটি জিনিস আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। হতে পারে তা খাদ্যদ্রব্য, বনজঙ্গল, নদীনালা এমনকি মানুষ পর্যন্ত। স্বাভাবিকভাবেই শহর-বন্দর, হাট-বাজারও এর বাইরে নয়। আমাদের দেশের  পার্বত্য অঞ্চলের বাজারগুলোর রয়েছে ভিন্ন এক বৈশিষ্ট্য। একটু লক্ষ্য করলে বোঝা যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাজারগুলোর চেয়ে এগুলো অনেকটাই আলাদা। বান্দরবানের রুমা বাজার তেমনই একটি। জেলা সদর থেকে দূরত্ব প্রায় পঞ্চাশ কি.মি.। বাজারে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল, একটি মাত্র মাছ নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। জেলা সীমান্তবর্তী রাঙ্গামাটির রাইক্ষং লেক থেকে শিকার করা গজার মাছটির ওজন ছয় কেজি। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই মাছটি বিক্রি হয়ে গেল। বিক্রেতার অভিব্যক্তি থেকে আন্দাজ করা গেল, প্রত্যাশার চেয়েও অধিক দাম তিনি পেয়েছেন। কততে বিক্রি করলেন, জিজ্ঞেস করতেই সে ডান হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে পাঁচ আঙুল ফাঁক করে বলল, পাঁচশ টাকা!স্থানীয় অন্যান্য বাজারের তুলনায় রুমা বাজার বেশ জমজমাট।নদী পারাপারের সেতুটির কাজ সম্পন্ন হওয়ায় বাজারের চেহারায় খানিক পরিবর্তন এসেছে। জুতা-স্যান্ডেল থেকে শুরু করে টেলিভিশন ও ডিভিডি প্লেয়ার পর্যন্ত পাওয়া যায়। বাজারটি দুটি অংশে বিভক্ত। এক পাশে বাঙালিদের দোকানপাট, অন্য পাশে পাহাড়িদের। বাঙালি দোকানগুলোর মালিক প্রায় সবাই সাতকানিয়া থেকে যাওয়া। পাহাড়িদের দোকানে যে পণ্যগুলো বিক্রি হয় এর অন্যতম হলো ‘নাপ্পি’। এই আইটেম ছাড়া তাদের খাবার থাকে অসম্পূর্ণ। তেলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যে কোনো প্রকার তরকারিতে নাপ্পি ব্যবহৃত হয়। উৎকট গন্ধের এই  উপকরণ বিভিন্ন প্রকার সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি থেকে তৈরি হয়। এর প্রক্রিয়া জানতে চাইলে দোকানি বাদল ত্রিপুরা জানান, প্রথমে শুঁটকি গুঁড়া করতে হয়। তারপর বিশেষ পদ্ধতিতে একে মণ্ডে রূপ দেয়া হয়। এরপর সেই মণ্ড কেটে কেটে বিক্রি করা হয়। পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়া বেশি হয়। নাপ্পিকে এখনও তারা ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে বিবেচনা করে। থানচী বাজারের অবস্থানও একই জেলার আর এক প্রত্যন্ত এলাকায়। সদর থেকে সড়ক পথে যেতে সময় লাগে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। বাজারের আয়তন তেমন বড় না হলেও জনসমাগম লেগেই থাকে। কারণ আশপাশে দশ পনেরো মাইলের মধ্যে অন্য কোনো বাজার নেই। বাজারটি বিভিন্ন প্রকার ফল ও সবজিসহ নানা প্রজাতীর পাহাড়ি জুম চালের জন্য বিখ্যাত। হলুদ ও আদা ফুলের সালাদ স্থানীয়দের অত্যন্ত প্রিয় একটি খাবার। সেখানে দেখলাম, ছোট ছোট এক ধরনের হলুদ রংয়ের ফুল- নাম অগয্যা। ছড়ায় যে মাছ পাওয়া যায় তার সঙ্গে অগয্যা নাকি অসাধারণ। এ ছাড়াও তারাডাটা, বয়লা শাক, ইয়েরিং শাক, কয়দা, তিতগুলা, কলার মোচা বাজারের প্রধান পণ্য। চালের মধ্যে জুমে উৎপাদিত মাখাই, গ্যালন, রাংকুই ও চানালারী চাল বিকিকিনি হয় অধিক। অধিকন্তু বিন্নি চাল তো রয়েছেই। পিঠা-পুলি বানাতে সে চালের কদর তারা জানে।