সাতসতেরো

হারিয়ে যাচ্ছে তালের ডোঙ্গা

মাগুরা, ৬ সেপ্টেম্বর: মাগুরায় এক সময় সর্বত্র চোখে পড়তো তাল গাছ দিয়ে তৈরি ডোঙ্গা।

তালের এই বিশেষ নৌকা ছিল গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম বাহন। এখন আর ডোঙ্গা তেমন দেখা যায় না। বলতে গেলে হারিয়ে যেতে বসেছে এই নৌকা।

স্থানীয়রা জানান, আগে এসব এলাকায় বর্ষা হতো। বিলে ঝিলে পানি থাকত সারা বছর। বাড়ি থেকে হাট বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল তালের ডোঙ্গা।

দুই তিনজনের পারাপার, মাছ ধরা, ধান কাটা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ, বিল বাঁওড় পুকুরে মাছের ঘেরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো তালের ডোঙ্গা।

মাগুরা সদর, শ্রীপুর শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বিল এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ডোঙ্গার এখনও ব্যবহার চোখে পড়ে। তালের ডোঙ্গার বাইচ প্রতিযোগিতা গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা।

স্থানীয় ডোঙ্গা তৈরির কারিগররা জানান, তাল গাছের আধিক্যের কারণেই অঞ্চলে এক সময় প্রচুর ডোঙ্গা তৈরি হতো। ডোঙ্গা তেরি করে জীবিকা নির্বাহ করত অনেক লোকজন। বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এখানে আসতেন ডোঙ্গা কিনতে। কেউ কারিগর নিয়ে বাড়ির উপর তৈরি করতেন তালের ডোঙ্গা।

তিন প্রজন্মের এই পেশা সস্পর্কে মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা গ্রামের আওয়াল শেখ বলেন, তিনি এই কাজ শিখেছেন তার বাবা আমীর শেখের কাছ থেকে। তার ছেলে ফরিদ শেখ এখন ডোঙ্গা তেরির কাজ করেন।

তিনি বলেন, এক সময় এ এলাকায় প্রচুর তাল গাছ ছিল। ফলে এসব এলাকায় বেশি ডোঙ্গা তৈরি হতো। নানা সংকটে কারিগররা হারিয়ে গেছে, সেই সাথে ডোঙ্গাও। এখনও দু-এক জায়গায় তৈরি হয় ডোঙ্গা। তার এলাকায় এখনও ১৫-২০ জন ডোঙ্গা তৈরির কাজ করেন।

ফরিদ শেখ বলেন, ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী একটি তাল গাছ থেকে দুটি ডোঙ্গা তৈরি করা যায়। ডোঙ্গার মাথা বিভিন্ন নকশা করে তৈরি করা হয়। একেকটি বিক্রি হয় তিন থেকে চার হাজার টাকায়। আর গাছ কেনা যায় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।

ভালো গাছের ডোঙ্গা ৮-১০ বছর ব্যবহার করা যায়। বর্ষা চলে গেলে ডোঙ্গা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ডোঙ্গা বেশি বিক্রি হয়।

বাংলা একাডেমীর লোকজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংগ্রাহক ও মহম্মদপুর উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য গ্রন্থের লেখক মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ মিলটন বলেন, ‘মাগুরা অঞ্চলে এক সময় ডিঙ্গি নৌকা, টাবুরে নৌকা ও তালের নৌকার প্রচলন ছিল। টাবুরে নৌকা ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কোন মতে টিকে আছে তালের নৌকা (ডোঙ্গা)।

এটি পরিবেশ বান্ধব ও সহজ নৌযান। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।

রাইজিংবিডি/শাহীন/ডিএইচ/এলএ