সাতসতেরো

সবকিছুই এখন ফুলময়

শাহ মতিন টিপু : ফুল ভালোবাসে না- এমন কে আছে? কার অন্তর না মাতে ফুলের পরশে! বাঙ্গালির জীবনাচরণে, সংস্কৃতির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে ফুলের সৌরভ। পহেলা ফাল্গুনে খোঁপায় তাজা ফুল গুঁজবে না এমন তরুণী খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার পরদিন ভালোবাসা দিবস। তাই ফুল অপরিহার্য্য।

 

আজ পহেলা ফাল্গুন, কাল ভালোবাসা দিবস। তাই রাজধানীতে আগাম ফুল কেনার ধুম পড়েছে। ফুল দোকানগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে কেনা-বেচা। তাই এখন ফুলের দোকানে ভীড়।  বলা যায়, সবকিছুই এখন ফুলময় রঙীন।

 

ফুল সৌন্দর্য ও ভালোবাসার প্রতীক। ভালোবাসার উচ্ছাসমাখা এ দুটি দিবসে ফুল থাকবে -এটাই সহজাত। ফুল যেমন নিজের সাজসজ্জায় প্রয়োজন, তেমনি উপহারেও অনন্য। যেমন- কবি পুর্ণেন্দু পত্রী তার প্রিয়ার উদ্দেশে লিখেছেন, `তুমি ফুল ভালোবাস বলে-/তোমাকে ফুলের বৃন্তে মাঙ্গলিক উৎসবের মতো লাগে বলে-/আমাকে ফুলের খোঁজে যেতে হয় পথ খুঁজে খুঁজে-/সিন্ধুনদ, হিন্দুকুশ, হরপ্পার মতো দূর-দূরান্তরে।`

 

প্রাপ্ত একটি তথ্যমতে, প্রতিদিন শুধু রাজধানীতেই পাইকারী বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। আর বিশেষ বিশেষ দিবসে (যেমন পহেলা ফাল্গুন) ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়।

 

বলা হয়, দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের পথিকৃত জেলা যশোর। সারাদেশে চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ফুল এই জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। তবে যশোরের ফুল চাষ এখন ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফুল চাষ অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক।

 

ফুলের রাজধানী গদখালীর পাইকারি বাজার এখন জমজমাট। বসন্ত বরণ আর ভ্যালেন্টাইন ডে-কে সামনে রেখে গত দু’দিন ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। দেশের নানা প্রান্তের ফুল ব্যবসায়ীরা গদখালীর ফুলহাটে ভিড় করছেন। গত দু’দিনে এখানে অন্তত ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ভালো বেচাবিক্রিতে বেজায় খুশি ফুলচাষিরা।

 

মনে করা হচ্ছে, আজ বছরের সর্বাপেক্ষা বেশি ফুল বিক্রি হবে। আর সে আশাতেই মুখিয়ে আছেন সেখানকার ফুলচাষিরা। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ উৎসব সামনে রেখে যশোরের গদখালী পাইকারি হাট থেকে গত বৃহস্পতিবার দুই কোটি টাকার ফুল সরবরাহ হয়েছে। এই ফুল গেছে রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা প্রভৃতি বিভাগীয় শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই তথ্য দিয়েছেন গদখালী ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম।

 

তিনি বলেন, সমিতির চালান দেখে ফুল বিক্রির এই হিসাব করা হয়েছে। আর ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ফুলের বাজার চড়া যাচ্ছে। তার মতে, গত ছয় দিনে গদখালী থেকে সারা দেশে অন্তত ১০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহ হয়েছে।

 

গদখালী হাটে এখন গোলাপ, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা এসব ফুলের সমারোহ। সেখান থেকে দূরদূরান্তের পাইকারেরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ফুল কিনে ট্রাকে ও ট্রেনে করে এবং যাত্রীবাহী বাসের ছাদে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। ভালো দাম পেয়ে ফুলচাষিদের মুখে ফুটেছে চওড়া হাসি। তাঁদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও বেশ খুশি।

 

জানা গেছে, প্রতিটি গোলাপ ৯ থেকে ১০ টাকা, জারবেরা ১২ থেকে ১৫ টাকা, গ্লাডিওলাস ৫ থেকে ১১ টাকা ও রজনীগন্ধা ৩ টাকা পাইকারি দরে বেচাকেনা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদা ফুল।

 

প্রতিদিনই ভোর ছয়টা থেকে গদখালীতে পাইকারি ফুলের হাট বসে। একটু বেলা হতে না হতেই অর্থাৎ রোদ উঠতে না উঠতেই এ হাটের কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়। সে জন্য পাইকার ও ব্যবসায়ীরা আগের দিনই এ হাটের আশপাশে এসে অবস্থান করেন।

 

ফুল ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা বরাবরই বেশি থাকে। ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ি, বৃহস্পতিবার তিন লাখ গোলাপ কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে মুঠোফোন কোম্পানি রবিই নিয়েছে ৭৫ হাজার গোলাপ। তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদাই বেশি থাকে। তবে এ দিবসটি ঘিরে অন্য ফুলেরও ব্যবহার বাড়লে চাষি এবং ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি শুভেচ্ছা জানানোর ধরনেও বৈচিত্র্য আসবে।

 

যশোর অঞ্চলে কী পরিমাণ জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য দুটি তথ্য রয়েছে। ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতির মতে, এ বছর ৯০০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এর সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর যশোর জেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে।’ তিনি বলেন, গদখালী থেকে ফুলের চাষ এখন কেশবপুর, মনিরামপুর, শার্শা ও চৌগাছা প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, সারাদেশে ১৯ জেলায় ফুল চাষ হয়। এর মধ্যে যশোর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার ও নারায়ণগঞ্জ অন্যতম। প্রতিবছরই ফুলের চাষ বাড়ছে।

 

খামারবাড়ির তথ্য মতে, সারাদেশে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ফুল ও বাহারি গাছের চাষ হচ্ছে।

       

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/টিপু