সাতসতেরো

যে উপজাতির নিজস্ব ক্রিকেট টিম আছে

শাহিদুল ইসলাম : আফ্রিকার আদি কৃষকগোষ্ঠী মাসাই। কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়ার দক্ষিণে সীমান্ত অঞ্চলে ভিক্টোরিয়া হ্রদের পশ্চিম তীরে বসবাস এ উপজাতির লোকদের । প্রাচীন এ আদিবাসী গোষ্ঠীর জীবন-ব্যবস্থায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। এখন তাদের সুসংগঠিত ক্রিকেট দলও আছে। এবার জেনে নেওয়া যাক, মাসাই উপজাতিদের জীবনের গল্প, তাদের পরিবর্তনের গল্প। আদিম যাযাবর থেকে সভ্য ক্রিকেট খেলোয়াড় হয়ে ওঠার গল্প।  মাসাইরা আফ্রিকায় পশু পালনকারী সম্প্রদায় নামে খ্যাত। মাসাইদের সমৃদ্ধি তথা সামাজিক অবস্থান নির্ভর করে কার কটা গরু, তাই দেখে।  গবাদি পশুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তাদের আর্থসামাজিক কাঠামো। সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা নির্ভর করে সাধারণ অধিকারে থাকা গরুর সংখ্যার ওপর। আদর্শ কৃষিভিত্তিক সমাজের উদাহরণ দিতে গেলে মাসাইদের কথা এখন সবার আগে চলে আসে, যদিও তাদের জীবনব্যবস্থা সভ্য মানুষের মতো নয়।মাসাইদের দৈহিক গড়ন অদ্ভুত। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় গলা ও পা বেশি লম্বা। বেশিরভাগ মাসাই মাটির এক ধরনের গাছের তৈরি কুঁড়েতে বাস করে।  ব্রাসউড নামে গাছ দিয়ে তারা কুঁড়ে তৈরি করে। এসব কুঁড়েঘর মাসাইদের ঐতিহ্যের প্রতীক। মাসাই যুবকদের জীবন ভবঘুরেদের মতো। তারা  ১৩ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বনে-জঙ্গলে কাটায়। বনে-বাদাড়ে অহেতুক ঘুরে বেড়ায় না তারা। এ সময় তাদের ওপর নিজেদের তৈরির দায়িত্ব থাকে, যা বংশ পরম্পরায় খানিকটা একাই চলে আসছে। বনে-জঙ্গলে জীবনের সুবর্ণ সময় কাটালেও এ সময় তারা যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে। এ কৌশলের ওপর ভর করে তাদের দক্ষতা নির্ধারিত হয়। বাকি জীবনে সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে তারা ওই কৌশলের আশ্রয় নেয়। বন-জঙ্গলের জীবন শেষে আবার নিজ গোত্রে ফিরে আসে যুবকরা। এরপর শুরু হয় সাংসারিক জীবন। সংসারে আধুনিক সভ্যতার উপকরণ কম থাকলেও তাদের যা আছে, তা কিন্তু কম সুন্দর নয়।

  মাসাইদের খাদ্যাভ্যাসে রোমহর্ষক এক উপাদান রয়েছে। শুনলে গা শিউরে উঠতে বাধ্য। তাদের পছন্দের খাবারের মধ্যে আছে গরু, বিশেষ করে ষাঁড়ের তাজা রক্ত। তবে মাসাইদের প্রধান খাদ্য ভুট্টা ও বজরা। বজরা আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের খাবার। তবে পশুর দুধও তাদের প্রিয় খাবার। গবাদি পশুর ব্যাপারে মাসাই সম্প্রদায়ের লোকেরা খুবই স্পর্শকাতর। এ নিয়ে অনেক নিয়ননীতি পালনের রেওয়াজ রয়েছে। তা ছাড়া এ উপজাতির লোকরা গবাদিপুশুর প্রতি দারুণ অনুরক্ত। পশুপ্রেমী মাসাইরা সাধারণত গবাদিপশু হত্যা করে না। খুবই অসুস্থ বা মৃতপ্রায় না হলে মাসাইরা গবাদিপশু হত্যা করে না। অন্য যাযাবর গোষ্ঠী থেকে মাসাইদের সহজে আলাদা করা যায়। পোশাক ও জীবনাচরণ ও দৈহিক গড়ন, সব মিলে মাসাইরা অন্য উপজাতিদের চেয়ে আলাদা। তবে বর্তমানে আধুনিকতার আলোকচ্ছটা তাদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। নিজেদের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে তারা আধুনিকতার আলো নিতে শুরু করেছে। সামাজিক রীতিনীতিগুলো প্রাচীন হলেও নতুন ধ্যান-ধারণায় আগ্রহ রয়েছে তাদের। বাল্যবিবাহ রোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ, এইডস/এইচআইভি সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষে সমতা এবং শিক্ষার প্রসারে তাদের মধ্যে কিছু অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। অন্যান্য আফ্রিকান গোত্রের মধ্যে যা খুব একটা দেখা যায় না। মাসাই গোষ্ঠী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি তাদের সংস্কারমূলক কাজ আফ্রিকার অন্য গোত্রগুলোর মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে। সভ্যতার স্বাদ নিতে শুরু করেছে তারা। বিনোদন-ক্রীড়া ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মাসাই আদিবাসী গোত্র গড়ে তুলেছে একটি ক্রিকেট দল, যার নাম ‘মাসাই ক্রিকেট ওয়ারিয়র্স’। মাসাইয়ের এই ক্রিকেট যোদ্ধাদের লক্ষ্য আধুনিক, শিক্ষিত ও কুসংস্কারমুক্ত একটি গোষ্ঠী হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের তুলে ধরা। নিজেদের মূলটাকে অপরিবর্তিত রেখেই তারা অর্জন করতে চায় তাদের লক্ষ্য। এ জন্যই মাসাই ক্রিকেট দল অন্য সব ক্রিকেট দল থেকে ভিন্ন। মাসাইরা ক্রিকেট খেলে অন্য সবার মতোই, কিন্তু তারা জার্সি, টি-শার্ট বা ট্রাউজার পরে না। মাসাই ক্রিকেট ওয়ারিয়র্স মাঠে নামে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেই, সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে থাকে অদ্ভূত মাসাই গয়না।রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জুলাই ২০১৬/রাসেল পারভেজ