আমিনুল ইসলাম : পপর্কন বা ভুট্টার খই অনেকেরই পছন্দের। পপকর্ন ছাড়া যেন জমতেই চায় না সিনেমা দেখার সময়টা। বন্ধুদের আড্ডায়ও চাই পপকর্ন। ছোট-বড় সব বয়সীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে এই পপকর্ন। সুস্বাদু পপকর্নের রয়েছে লম্বা অতীত ইতিহাস। চলুন আজ সেগুলো দেখে নেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রত্নতত্ত্ববিদরা মেক্সিকো সিটিতে ৮০ হাজার বছরের পুরনো পপকর্নের সন্ধান পান। যার পরাগ (পপকর্নের স্ফীত অবস্থা) ঠিক আধুনিক যুগের পপকর্নের মতো! গবেষকরা বিশ্বাস করেন গুহাবাসী লোকজন পপকর্ন খেতেন। এমন কী লৌহ যুগের জলখাবার ছিল এই পপকর্ন।
পপকর্ন সর্বপ্রথম মেক্সিকোতে তৈরি হয়। যদিও কলম্বাস আমেকিরা আবিস্কারের শতবছর আগে চীন ও ভারতে পপকর্ন খাওয়া হত।
নিউ মেক্সিকোর ‘ব্যাট কেভে’ বা বাঁদুর গুহায় ৫ হাজার ৬০০ বছরের পুরনো পপকর্নের সন্ধান পাওয়া যায়। পেরুর সমাধীক্ষেত্রের ভেতরে প্রতœতত্ত্ববিদরা এমন শষ্যের (ভুট্টা) সন্ধান পান যেটা দারুণভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল প্রাচীনকালে। সেই শষ্যদানা থেকে এখনো পপকর্ন তৈরি করা সম্ভব!
আদি আমেরিকানদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল পপকর্ন। ১ হাজার ৭০০ বছরের পুরনো একটি অন্তেষ্টিক্রীয়ার হাতে আঁকা ছবি পাওয়া যায় মেক্সিকোতে। সেখানে দেখা যায় শষ্যদেবতার মাথায় একটি মুকুট রয়েছে। আর সেই মুকুটটি তৈরি করা হয়েছে পপকর্ন দিয়ে!
ইউরোপিয়ানরা আদি আমেরিকানদের কাছ থেকে পপকর্ন সম্পর্কে ধারণা পায়। কর্টিস যখন মেক্সিকো দখল করেন এবং কলম্বাস যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে পৌঁছান- তখন তারা উভয়েই স্থানীয়দের দেখেছিলেন পপকর্ন খেতে। তখন স্থানীয়রা নাকফুল হিসেবে পপকর্ন ব্যবহার করত। মাথার মুকুট তৈরিতেও ব্যবহৃত হত পপকর্ন।
আদি আমেরিকানরা ধন্যবাদ বিনিময়ের সময় (থ্যাঙ্কস গিভিং) এক ব্যাগ পপকর্ন নিয়ে আসত। কেউ কেউ দাবি করে থাকেন যে আমেরিকানরা পপকর্নের বিয়ার ও পপকর্নের স্যুপ তৈরি করে খেত। আর উপনিবেশিকরা আস্তে আস্তে পপকর্ন খেতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে এবং এক সময় তাদের সকালের নাস্তায় অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে উঠে পপকর্ন। ইউরোপিয়ানরা তখন ক্রীম ও মিল্ক দিয়ে পপকর্ন খেত।
শুধু আদি আমেরিকানরাই নয়, আধুনিক যুগের আমেরিকানদের কাছেও পপকর্ন খুবই জনপ্রিয় একটি জলখাবার। ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্রে পপকর্ন খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীতে সেই জনপ্রিয়তা তুঙ্গে পৌঁছায়। তখন রাস্তা কিংবা পার্ক, কিংবা থিয়েটারের পাশে- সবখানেই সহজলভ্য ছিল পপকর্ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনি রেশনে চলে যায়। তখন সাধারণ মানুষের জন্য চিনি সহজলভ্য ছিল না। তাই তাদের জলখাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন চলে আসে। তারা আগের মতো তিনবেলা পেটপুড়ে পপকর্ন খেত!
বর্তমান সময়ের মতো আগের শতাব্দীতেও পপকর্ন খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা ছিল সিনেমা হল। ১৯৫০ সালে যখন টেলিভিশন আসল তখন পপকর্ন বিক্রির পরিমাণ হঠাৎ কমে গেল। বর্তমানে একজন আমেরিকান বাৎসরিক তিন পোয়ার (৭৫০ গ্রাম) চেয়ে একটু বেশি পপকর্ন খেয়ে থাকেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্র কেবল পপকর্নপ্রেমীদের দেশ নয়। তারা পপকর্ন তৈরির মূল উপাদান ভুট্টা উৎপাদনকারী দেশও। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের পপকর্ন রফতানি হয়ে থাকে।
প্রথম দিকে পপকর্ন তৈরি করার জন্য তারের ঝুড়ি ব্যবহার করা হত। ওই তারের ঝুড়িতে ভুট্টা রেখে খোলা আগুনের উপর রাখা হত। তাপে সেটা ভুট্টার খই তথা পপকর্নে পরিণত হত। আর ১৮৮৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে পপকর্ন বানানোর মেশিন প্রথম আবিষ্কার করেন শিকাগোর চার্লস ক্রেটরস।
পপকর্ন যে শুধু মুখরোচক তা নয়, বেশ পুষ্টিকরও বটে। প্রতি ১০০ পপকর্নে আছে- কার্বোহাইড্রেট ৭৮ গ্রাম। খাদ্য আঁশ আছে ১৫ গ্রাম। চর্বি ৪ গ্রাম, প্রোটিন ১২ প্রাম। প্রোটিনের মধ্যে থিয়ামিন বা ভিটামিন বি-১ আছে ১৫ ভাগ, রিবোফ্ল্যাবিন বা ভিটামিন বি-২ আছে ২০ ভাগ এবং আয়রন আছে ২২ ভাগ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬/আমিনুল