সাতসতেরো

বিশ্বদরবারে বাংলাদেশি তরুণের সাফল্য

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একাধিকবার আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। তবে দেশের বাইরে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার স্বাদ এবারই প্রথম পেলাম। সবচেয়ে ভালো লেগেছে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে। চ্যাম্পিয়নের ঘরে যখন অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও লেখা হল তখন নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হচ্ছিল। দেশের নাম বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারা সবসময়ই সম্মানের ও গর্বের।’ - কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান রনি।

 

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত রিয়াও ইন্টারন্যাশনাল ইয়্যুথ সামিট ২০১৬-এ ‘সেরা অ্যাকশন প্ল্যান’ অ্যাওয়ার্ড জিতেছে বাংলাদেশের আহসান রনি ও তার টিম। সামাজিক উদ্যোগ বিষয়ক একটি প্ল্যান তৈরি করে বিশ্বের ৬টি দেশের ১২ সদস্যের এই দলটি সেরা আইডিয়া বা ‘সেরা অ্যাকশন প্ল্যান’ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

 

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিয়াও ইন্টারন্যাশনাল ইয়্যুথ সামিট ২০১৬-এর জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া উদ্যোগী তরুণদের অনলাইনে আবেদন আহবান করা হয়। বাংলাদেশ থেকেও ইয়্যুথ সামিট এ যোগ দিতে সহস্রাধিক আগ্রহী তরুণ আবেদন করেন। বাছাই প্রক্রিয়ার পর বিশ্বের মোট ২১টি দেশের ১৫০ জন সমাজের অগ্রগামী সক্রিয় তরুণদের অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এই সম্মেলনে। সুযোগ পায় বাংলাদেশের সাত তরুণ। আয়োজকেরা ২৬ নভেম্বর অংশগ্রহণকারীদের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে।

 

গত ৬ ডিসেম্বর রিয়াও ইন্টারন্যাশনাল ইয়্যুথ সামিট ২০১৬-তে অংশ নিতে রওনা হয় ৭ সদস্যের বাংলাদেশ দল। এই সামিটের আয়োজনে ছিল ইন্দোনেশিয়ার পেকানবারু রাজ্যের সরকার। রাষ্ট্রীয় সকল সুবিধা দিয়ে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে যাওয়া হয়।

 

আহসান রনি জানান, চার দিনব্যাপী ইয়্যুথ সামিটের প্রথম দিন ছিল স্থানীয় গভর্নরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত, ফটো সেশন, ইন্দোনিশিয়ান সাংস্কৃতি, দুর্নীতি রোধে তরুণদের ভাবনা, মতবিনিময়, উপস্থাপন। দ্বিতীয় দিন ছিল স্থানীয় ধরমা উধা স্কুল সফর, চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে সাংস্কৃতি, গান, নাচ ও মার্টশাল আর্ট সম্পর্কে জানা। তৃতীয় দিন ৯ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ান দুর্নীতি বিরোধী দিবসে যোগ দেন ইয়ুথ সামিটে অংশগ্রহণকারী তরুণেরা। তিনি স্থানীয় গভর্নর আরিশারজুলিয়ানদি রহমানকে ব্যাচ পরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পান। শেষ দিন শিক্ষা ব্যবস্থা ও সামাজিক উদ্যোগের দুটি সেরা উপস্থাপনকারী দলকে চ্যাম্পিয়ান ঘোষণা করা হয়।

আয়োজকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করা এবং সারা পৃথিবীর জন্য তাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। এরই অংশ হিসেবে ১৫০ জন তরুণকে ১২টি গ্রুপে করে শিক্ষা ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিয়ে নতুন আইডিয়া ও সেই আইডিয়া থেকে কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব সেই প্ল্যান করার জন্য বলা হয়। উদ্যোগের ক্ষেত্রে সমস্যা ও উত্তোরণের উপায় খুঁজে বের করা। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা লি গ্যাপ জু ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ মুভমেন্ট নিয়ে আলোচনা করেন।

 

আহসান রনি বলেন, আগ্রহ অনুযায়ী আমাকে উদ্যোগ গ্রুপে দেওয়া হয়। আমাদের গ্রুপে আমি ছিলাম বাংলাদেশের প্রতিনিধি। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মেক্সিকো, থাইল্যান্ডের মোট ১২ জন সদস্য ছিল। আমরা সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করা শুরু করি এবং আলোচনার মাধ্যমে ‘সনেকশন’ নামে একটি সামাজিক উদ্যোগ বের করি ও সেটির পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেই। সামাজিক উদ্যোগগুলোকে আর্থিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও নেটওয়ার্কিং বিষয়ক সহায়তা প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম হচ্ছে ‘সনেকশন’। সকল গ্রুপের আইডিয়া ও প্রেজেন্টেশনের ওপর বিচার করা হয়, সার্বিক বিচারে উদ্যোগ বিভাগে ‘সেরা অ্যাকশন প্ল্যান’ পুরষ্কার পাই আমরা।’

 

তরুণ প্রজন্মের উদ্যেশে আহসান রনি বলেন, ভালো লাগার জায়গা থেকে নিরলসভাবে পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই।

 

উল্লেখ্য, আহসান রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতি সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া তিনি কাজ করছেন ‘চালডাল ডটকম’, ‘ইভেন্ট ইন বিডি’, ‘ভয়েজ- এ ফাউন্ডেশন’-সহ নানা উদ্যোগ নিয়ে। চলতি বছর তিনি ভারত, নেপাল, ভূটানে যুব সম্মেলন সহ একাধিক প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ডিসেম্বর ২০১৬/ফিরোজ