শাহিদুল ইসলাম : গত বছরের অক্টোবর মাসে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাইরাস মিস্ত্রির অপসারণের পর দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী টাটার নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নটরাজন চন্দ্রশেখরনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ‘চন্দ্র’ নামে সমধিক পরিচিত এ করপোরেট ব্যক্তিত্ব ২১ ফেব্রুয়ারি টাটা গ্রুপের সপ্তম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তার ব্যবসায়িক দূরদৃষ্টি টাটা গ্রুপের প্রভূত সাফল্য ধরে রাখতে সচেষ্ট হবে বলে বিশ্বাস করা হচ্ছে। ব্যক্তিজীবনে নটরাজন চন্দ্রশেখরন শুধু সফল ব্যবসায়ী নন, একজন দৌড়বিদও বটে। তিনি বোস্টন, বার্লিন, নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ও মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরে একাধিকবার ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন। এ বিষয়ে বেশ কয়েক বছর আগে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি দৌড়াতে ভালোবাসি। এটা আমাকে একজন ভালো শ্রোতা হতে এবং শান্ত থাকতে সাহায্য করে।’ টাটায় তিন দশক তিন দশক আগে টাটা গোষ্ঠীতে যোগদানকারী নটরাজন ব্যবসা-বাণিজ্যের দুনিয়ায় বেশ পরিচিত মুখ। ৫৩ বছর বয়সি এন চন্দ্রশেখরন ১৯৮৭ সাল থেকে টাটা গ্রুপের সঙ্গে রয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি টাটা গোষ্ঠীর অধীনস্থ সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের (টিসিএস) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। টাটা গোষ্ঠীর অধীনস্থ সংস্থাগুলোর মধ্যে টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস এই মুহূর্তে সবচেয়ে লাভজনক সংস্থা। টাটা গোষ্ঠীর ‘জুয়েল’ নামে খ্যাত টিসিএস টাটার মোট লাভের প্রায় ১০ শতাংশ জোগান দেয়। এমনকি বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও সংস্থাটি যথেষ্ট ভালো করেছিল। সম্প্রতি টিসিএস চলতি অর্থবছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের হিসাব প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পূর্বাভাস ব্যর্থ করে দিয়ে ৬ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সংস্থার এই বিপুল লাভের কৃতিত্ব অনেকটাই নটরাজন চন্দ্রশেখরনের। ২০০৯ সাল থেকে তার নেতৃত্বে টিসিএসের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধিই হয়েছে। এ সম্পর্কে উইপ্রো লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ আবিদাল নিমুচাওলা বলেন, ‘তিনি (চন্দ্রশেখরন) একজন বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতা এবং ফলাফলের প্রতি তার দূরদৃষ্টি রয়েছে।’ যেতে হবে বহুদূর টাটা শিল্পগোষ্ঠীর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া নটরাজন চন্দ্রশেখরনকে অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। কারণ গত বছরের অক্টোবরে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাইরাস মিস্ত্রির অপসারণের পর মিস্ত্রি ও টাটার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে কদর্য রূপ নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এতে করে ভোক্তাদের কাছে টাটার ভাবমূর্তি সাংঘাতিকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং টাটা গোষ্ঠী আগের তুলনায় ভোক্তাদের কাছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের পরিচালক কাবিল রামচন্দ্র বলেন, ‘নটরাজন চন্দ্রশেখরনের প্রথম কাজ হবে ভোক্তাদের মনে টাটা সম্পর্কে সেই পুরোনো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা।’ দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে- তার সফল নেতৃত্বের মাধ্যমে বিশ্বের ১০০টি দেশে ছড়িয়ে থাকা টাটা গ্রুপকে আগের মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। টাটা গ্রুপের মোট সম্পদের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার। বেশ কয়েক বছর ধরে টাটা গ্রুপ মুনাফার দিক থেকে খুব ভালো অবস্থানে নেই। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত টাটা স্টিল এবং ভারতে টাটা মোটর গত কয়েক বছর ক্রমাগত লোকসানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আর তাই টাটা সন্সের বোর্ড সদস্যরা মনে করছেন, কোম্পানির এই অবস্থায় চন্দ্রশেখরনের হাতেই টাটা গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জানুয়ারি ২০১৭/রাসেল পারভেজ/এএন