সাতসতেরো

নৈশপ্রহরীর জীবন

রাজিব হোসেন আনান : নৈশপ্রহরী, তারা আমাদের ঘরবাড়ি, অফিস, দোকানপাট রাতে পাহারা দেন। আমরা যখন বিছানায় আরাম করে ঘুমাই, তখন তারা রাতভর প্রহরায় ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু বিনিময়ে তারা যা অর্থ পান, তা জীবনযাপনের জন্য খুবই কম। আমাদের দেশে অনেক নৈশপ্রহরীর বেতন পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকারি নৈশপ্রহরীদের বেতন অবশ্য আরো বেশি। কিন্তু এলাকা বা বাসা-বাড়িতে দায়িত্বে থাকা অনেক নৈশপ্রহরী দায়িত্ব পালন করে থাকেন স্বল্প বেতনে। এমনি একজন নৈশপ্রহরী তৈয়ব আলী, বয়স আনুমানিক ৭০। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি বাড়িতে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। দুই সন্তানের জনক তৈয়ব আলী, কথা হল তার সঙ্গে, বললেন বাড়িটিতে তিনি নৈশপ্রহরীর কাজ করেন কিন্তু মাস শেষে বেতন পান মাত্র পাচঁ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে জিজ্ঞেস করতেই, কষ্টের ছাপ ভেসে উঠল তৈয়ব আলীর মুখে। বললেন ‘কী করমু এখন এই বয়সে তো অন্য কাম করতে পারি না, কোনো রকমে চলি আরকি’। দিনেও খুব একটা ঘুমানোর ফুসরত মেলে না তৈয়ব আলীর। বড় ছেলে নিজের কাছে থাকলেও ছোট ছেলে থাকে আলাদা। এভাবেই চলছে তৈয়ব আলীর জীবন। আরেকজন নৈশপ্রহরী জালাল উদ্দিন, বয়স ৬০। রাজধানীর ডেমরার একটি এলাকায় নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। হাতে টর্চলাইট, লাঠি, গলায় ঝুলানো বাঁশি। সারারাত এলাকার অলিগলি ঘুরে ঘুরে পাহারা দেন, মাঝে মাঝে ফুকঁ দেন বাঁশিতে। থাকে চোর ডাকাত আক্রমনের ভয়। কথা হল তার সঙ্গে। বললেন মাস শেষে বেতন পান মাত্র সাড়ে পাচঁ হাজার টাকা। যা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে জালাল উদ্দিনের। চার সন্তানের জনক জালাল উদ্দিন, এক ছেলে ও তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে দিলেও ছোট দুই মেয়ে অবিবাহিত। ছেলে তার স্ত্রী নিয়ে থাকেন আলাদা। সারারাত নির্ঘুম থাকার পরেও সকালে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ নেই জালাল উদ্দিনের। সংসারের হাল ধরতে দুপুরে আবার বেরিয়ে পরেন রিকশা নিয়ে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চালান রিকশা। এভাবেই নৈশপ্রহরীর বেতন আর রিকশা চালানোর উপার্জন দিয়ে কোনোরকমে চলে জালাল উদ্দিনের সংসার। আমাদের সমাজে যেন তৈয়ব আলী, জালাল উদ্দিনের মতো নৈশপ্রহরীদের দেখার কেউ নেই। প্রতিনিয়ত জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন তারা। রাতের অন্ধকারের মতো অন্ধকারেই থেকে যায় তৈয়ব আলী, জালাল উদ্দিনের মতো হাজারো নৈশপ্রহরীর সুন্দরভাবে বাঁচার স্বপ্ন।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৬/ফিরোজ