ফাতিমা রুনা : প্রতিনিয়ত পৃথিবীতে নানান কিছু আবিষ্কৃত হচ্ছে। এবার বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন প্রাচীনতম বিষাক্ত পতঙ্গ, যা পাওয়া গেছে লেবানিজ অ্যাম্বারের (শক্ত রেজিন বা আঠা) ভেতরে। এটি অন্য কোনো পতঙ্গ নয়, বরং একটি তেলাপোকা। তেলাপোকা সর্বভুক প্রাণী আর এর ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। প্রাণীটি বেশ বিচিত্রও বটে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিৎ হয়েছেন, তেলাপোকাদের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে যার জন্য এরা অন্য কীটপতঙ্গ একটু বেশি কষ্টসহিষ্ণু হয়। কোনো কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে তো বলা হয়েছে, পারমানবিক বিস্ফোরণের মাধ্যমে সমস্ত পৃথিবী ধ্বংস হলেও তেলাপোকা ঠিকই বেঁচে থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, অত্যাধিক বিষাক্ত এই তেলাপোকা ডাইনোসর যুগে পৃথিবীতে বসবাস করত। পতঙ্গটি বিষাক্ত হয়েছে এর চামড়ার দাগগুলোর কারণে। গবেষণাপত্র ক্রিটেসিয়াস জার্নালে প্রথম এর বর্ণনা পাওয়া যায়। সাধারণত প্রাগৈতিহাসিক সময়ের বহু প্রাণীই ফসিলে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু, পাথুরে ফসিলে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের দেহ অক্ষত থাকে না। তবে, এম্বারের মধ্যে ছোট ছোট প্রাগৈতিহাসিক কীটপতঙ্গগুলোর দেহ একদম ত্রিমাত্রিক অবস্থায় অক্ষতভাবে থাকে। ফসিল বা জীবাশ্ম খুঁজলে, খুব কম সংখ্যক কীটপতঙ্গর ফসিল পাওয়া যায়, যাদের বিস্তৃতি আছে ৩০০ মিলিয়ন বছর আগের কোনো স্তরে। এদের মধ্যে অন্যতম হল, তেলাপোকা। তেলাপোকাদের স্বর্ণ যুগ ছিল আসলে কার্বনিফেরাস পিরিয়ড, যখন পৃথিবীর সব কীটপতঙ্গের শতকরা ৪০ ভাগই ছিল তেলাপোকা প্রজাতির। সে কারণেই জীবাশ্মবিদরা কখনো কখনো এই পিরিয়ডকে তেলাপোকার যুগ বলে মন্তব্য করেন। মনে হতে পারে বিটলদের (এক ধরনের পোকা) প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখানোর আগে বিবর্তন প্রক্রিয়ার বিশেষ পছন্দের প্রাণী ছিল তেলাপোকারা।
ছবিতে দেখানো তেলাপোকাটির বয়স ১৩ কোটি বছর। লেবানিজ অ্যাম্বারে এটি সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে এটি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বিষাক্ত পতঙ্গ। এর দাগকাটা প্যাটার্ন অন্য শিকারি প্রাণীকে দূরে সরিয়ে দিতে ও সতর্ক করতে ব্যবহৃত হতো। বড় আকারে দুভাগে বিভক্ত চোখের পাশাপাশি, এই তেলাপোকার তিনটি ‘অসিল্লি’ নামের সাধারণ চোখ ছিল। অন্যান্য প্রাচীন কীটপতঙ্গদেরও তিনটি করে অসিল্লি দেখা যেত কিন্তু বর্তমান সময়ের কোনো তেলাপোকায় তেমন কিছুর অস্তিত্ব এখন আর নেই। এই তেলাপোকার তখন থেকে বাস করত যখন প্রজাপতি, ঘাস অথবা ফুলের আবির্ভাব ঘটেনি পৃথিবীতে। আত্মরক্ষার ক্ষেত্রে প্রাণীদের বিষের ব্যবহার অনেক পুরোনো। কিন্তু তেলাপোকা যে বিশ্বের প্রাচীনতম পতঙ্গ তা খুঁজে পাওয়া সত্যিই বিস্ময়কর।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জানুয়ারি ২০১৭/মারুফ/ফিরোজ