সাতসতেরো

খেলার ফুল ভাট

খান মোঃ শাহনেওয়াজ : বসন্ত ঋতুতে ফুলে ফুলে সেজেছে বাংলাদেশ। মাঠে প্রান্তরে যে ফুলগুলো সহজেই নজর কেড়ে নিচ্ছে তার অন্যতম হলো বনজুঁই। এই ফুল ভাট ফুল নামেই পরিচিত। কবি জীবনানন্দ দাশ তার ‘কোথাও মাঠের কাছে’ শিরোনামের কবিতায় লিখেছেন ‘বেতের বনের ফাঁকে- জারুল গাছের তলে রৌদ্র পোহায় / রূপসী মৃগীর মুখ দেখা যায়, - সাদা ভাট পুষ্পের তোড়া …।’ ভাট পুষ্প বাংলাদেশের মানুষের একেবারে চোখের সামনে থাকা ফুল। মুলতঃ এটি বুনো ফুল। ঋতুরাজ বসন্তে দেখা যায় এই ফুল। ঝোপ-ঝারে, জঙ্গলে, রাস্তার ধারে, এখানে সেখানে নিজের সুন্দর রূপ ছড়িয়ে থাকে ভাট ফুল বা বন জুঁই। এটি ভাইটা ফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, ঘণ্টাকর্ণ নামেও পরিচিত। একে বলা হয় হিল গ্লোরি বোয়ার (hill glory bower)। এর বৈজ্ঞানিক নাম ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম (Clerodendrum viscosum). ভারবেনাসেই (Verbenaceae) গণের এই ফুল ল্যামিয়াসেই (Lamiaceae) পরিবারভুক্ত। এটি ইনফরচুনাটাম (Infortunatum) প্রজাতির এবং বাংলাদেশের আদি ফুল। বাংলাদেশের মাটিতে এই ফুলের গাছ অত্যন্ত অনাদর আর অবহেলায় জন্মে এবং বেড়ে ওঠে। গাছ গুল্ম জাতীয়; ছোট আকৃতির ও বেশ ঝোপালো হয়। সবুজ বহুপত্রী ভাট গাছের ফুল ধবধবে সাদা। ফুল ফোটে থোকায় থোকায়। দেশের সর্বত্রই দেখা যায় এই ফুল। তবে ভাওয়াল গড় ও মধুপুর গড় এলাকায় ভাট গাছ প্রচুর জন্মায় এবং ফুলে ফুলে একেবারে ছেয়ে থাকে। ভাট ফুলের পাপড়ি পাঁচটি এবং পাপড়ির গোড়ার দিকটা হালকা বেগুনি রঙের। প্রতি ফুলে ৪টি করে পুংকেশর সামনের দিকে বেরিয়ে আসে। পুংকেশরের অগ্রভাগ হয় স্ফীত ও কালো। রাতে বেশ গন্ধ ছড়ায় এই ফুল। বসন্ত ঋতুর মাঝামাঝি এই সময়টা ভাট ফুলের ভরা মৌসুম। বনে বাদাড়ে অযত্নে অবহেলায় ফুটলেও এর রূপে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। প্রকৃতিপ্রেমী মোহাম্মদ রাসেল রাজধানী ঢাকা থেকে শনিবার (৪ মার্চ ২০১৭) লক্ষীপুর সদর উপজেলায় দুই নং দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নে পূর্ব নন্দনপুর গ্রামে তাদের বাড়িতে যান। সেখানে পুকুর পাড়ে ভাটফুল দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন। আবেগভরা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘অপার সৌন্দর্যের বাংলাদেশ; দেশের বাইরে যারা থাকেন তারাই বেশি উপলব্ধি করতে পারেন। এ গাছটা রাস্তার পাশে, ঝোপ-জঙ্গলে, পুকুর পাড়ে এমনিতেই হয়। আমাদের নোয়াখালী, লক্ষীপুরের আঞ্চলিক ভাষায় একে ভাইট গাছ বলে। এখন রাস্তার পাশে ভরা, দেখতে খুব সুন্দর লাগে। আমাদের বাড়ির পুকুর পাড়ে থোকায় থোকায় রয়েছে এই ফুল ! একদম ঘরের সাথেই পুকুর। ভাট ফুল দিয়ে ছোটবেলায় খেলতাম। অসাধারণ সুন্দর ফুল; আর ফুল তো অবশ্যই ভালো লাগে।’ রাজধানী ঢাকার মালিবাগে ভেনাস ইলেকট্রনিক্স নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী ও ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলা সদর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় এসেছি। মধুপুর-ময়মনসিংহ সড়কে গড়ের ভেতর রাস্তার দুপাশে এই ফুল নজর টেনে নিয়েছে। বিশেষ করে রসুলপুর এলাকা ছেয়ে আছে এই ফুলে।’ বৃক্ষপ্রেমী শিরোপা শর্মি বলেন, ‘এই ফুল নিজের মত করে বসন্ত ঋতুকে ফুটিয়ে তুলেছে। এর গন্ধ অনেক সুন্দর।’ গৃহবধু আনোয়ারা বেগম অনু বলেন, ‘দুদিন আগে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পথে এই ফুল দেখেছি। ছোটবেলায় কত খেলেছি এই ফুল দিয়ে! এ তো আমাদের খেলার ফুল...।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ মার্চ ২০১৭/শাহনেওয়াজ