সাতসতেরো

অসহায় নারীর আপন নিবাস

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : যৌবনে কেউ ছিলেন কর্মজীবী নারী, কেউ ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী আবার কেউ ছিলেন কারো পরম মমতাময়ী মা। কর্মক্ষম সময়ে যে মানুষটা নিজের জীবনের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন সন্তানের জন্য কিংবা পরিবারের ও রাষ্ট্রের জন্য, সে মানুষটি শেষ জীবনে এসে চরম অসহায় ও নিঃস্ব জীবন যাপন করেন। কাছের মানুষেরা খোঁজ নেয় না, ওরা ক্ষুধার্ত বা অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেন রাস্তায়, মাজারে। এমন সব অসহায় নারীদের নিয়ে রাজধানীর উত্তরখান মৈনারটেক এলাকায় সমাজকর্মী সৈয়দা সেলিনা শেলী গড়ে তুলেছেন আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম। ‘প্রবীণদের জন্য প্রত্যাশিত জীবন চাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে ৮ মার্চ ২০১০ সালে ৭ জন অসহায় বয়স্ক নারীদের নিযে যাত্রা শুরু হয়েছিল আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের। বর্তমানে বৃদ্ধাশ্রমটিতে বয়সী অসহায় নারীর সংখ্যা ২৫ জন।

সৈয়দা সেলিনা শেলী দীর্ঘদিন নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করেছেন। কাজ করতেন ধর্ষিত, নির্যাতিতা নারীদের আইনগত সমস্যা নিয়ে। কাজ করতেন ছিন্নমূল নারী, তৃণমূল নারী, কর্মজীবী নারীদের নিয়ে। সৈয়দা সেলিনা শেলী রাইজিংবিডিকে বলেন, যখন এই নারীরা বয়সের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন, অসহায় জীবন নিয়ে কান্নাকাটি করছেন- এমন কিছু অসহায় নারীর কান্না নিয়ে আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলেছি। আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে, উদ্যোক্তাদের নিজস্ব অর্থায়নে। সরকারি অনুদান ও এনজিওর সাহায্য মেলেনি কখনোই। শুরুতে আশ্রম চলতো মুষ্টিচাল সংগ্রহের মাধ্যমে। মুষ্টিচাল সংগ্রহ করা হতো উত্তরখান ইউনিয়ন ও আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে। ব্যক্তি বিশেষ সহযোগিতার জন্য মাঝে মাঝে এগিয়ে এলেও নিদির্ষ্ট কোনো দাতা নেই। মাসের কোনো একদিন খাবারের দ্বায়িত্ব নেয় কেউ কেউ। কেউ নিয়ে আসেন বৃদ্ধা নারীদের জন্য ফলমূল, কাপড়।

আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের অবস্থান একটি ভাড়া করা বাসায়। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত নারীর অধিকাংশ বিভিন্ন রোগে-শোকে ভুগছেন। কারো বাতের ব্যথা, কারো হাঁপানি, কারো ক্যানসার, কেউ আবার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, কেউ পঙ্গু। প্রতিমাসে একেকজনের চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। বয়সের কারণে অনেকে সব ধরনের খাবার খেতে পারেন না। পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সব সমস্যা মিটিয়ে ভালো খাবারের সামর্থ্য সব সময় কর্তৃপক্ষের থাকে না। আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সৈয়দা সেলিনা শেলী রাইজিংবিডিকে বলেন, যৌবনে আমি মানবধিকার কর্মী হিসেবে নারী মুক্তির জন্য দূর্দান্ত আন্দোলন করেছি। কিন্তু নারী মুক্তি তো অর্জিত হয়নি। তাহলে এত আন্দোলন, সংগ্রামের ফলাফল কি পেলাম? সেই অপূর্ণতা থেকে নারীদের জন্য সত্যিকারের কিছু করার জন্যই আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম। মানবিক মানুষের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রম। আপনিও আপন নিবাসে বৃদ্ধা নারীদের জন্য সামান্য সহায়তা পাঠিয়ে আপনার মানবিক অবদান রাখতে পারেন। সাহায্য পাঠাতে যোগাযোগ করতে পারেন, সৈয়দা সেলিনা শেলী: ০১৮১৬৭৭৯১৬৩। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৭/ফিরোজ