সাতসতেরো

ঝাড়ুয়ারবিল-পদ্মপুকুর গণহত্যা দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর :  রংপুরের বদরগঞ্জে ঝাড়ুয়ারবিল-পদ্মপুকুর গণহত্যা দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল  বদরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুর এলাকায় রাজাকার ও পাক হানাদাররা প্রায় ১২শ’নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে, সেদিন দু’টি ট্রেনে চড়ে রামনাথপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া ও কিসমত ঘাটাবিল এলাকার ঝাকুয়াপাড়া সংলগ্ন স্থানে আসে হানাদারদের দল। এরপর আলবদর কমাণ্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে পাকহানাদাররা রামনাথপুর ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা ঘিরে ফেলে বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট এবং হত্যাযজ্ঞ চালায়। এসময় যারা বেঁচে যান তারা প্রাণভয়ে আশ্রয় নেন ঝাড়ুয়ারবিল ও পদ্মপুকুর পাড়ে। কিন্তু রাজাকাররা টের পেয়ে পাক হানাদারদের জানালে ওই এলাকাও ঘিরে ফেলা হয় এবং নিরীহ বাঙালীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পাখির মত গুলি করে হত্যা করা হয়। সেদিনের ঘটনায় নিহতদের সকলের পরিচয় জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৩৬৫জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ৫জন শিক্ষক, ৩৫জন শিক্ষার্থী, ৫জন শিশু, ৪জন গ্রাম পুলিশ, ৪ জন নরসুন্দর, ২জন রাজমিস্ত্রি, ১জন জ্যোতিষী, ১জন চিকিৎসক, ৪৯জন গৃহিণী এবং ২৫৯জন কৃষক রয়েছেন।  যে ৫ শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মেনহাজুল ইসলাম, প্রাণকৃষ্ণ রায়, মাহতাব উদ্দিন, অনিল চন্দ্র রায় ও দিনেশ চন্দ্র রায়। ৫ শিশুর নাম- রোকসানা (১), আনোয়ারুল হক (৩), বাবু মহন্ত (৫), লুৎফা (৭) বরুন (২), মোমেন (৮)। গ্রাম পুলিশ সদস্যরা হলেন- শমসের, টন্না মিয়া, উমাচরণ, মোফাজ্জল হোসেন। নর সুন্দররা হলেন- ললিত চন্দ্র শীল, হরিপদ শীল, হরলোচন শীল, ললিন শীল। রাজমিস্ত্রিরা হলেন- শাহাজ উদ্দিন ও আতিয়ার রহমান। নিহত জ্যোতিষীর নাম- গোরা জ্যোতিষী এবং চিকিৎসকের নাম হলো- শশী ডাক্তার। কথা হয় বদরগঞ্জের রামনাথপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর এলাকার মাষাণ ডোবার আফজাল হোসেনের সঙ্গে। সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি তিনি আজো ভুলতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘সেসময় আমি বয়সে তরুণ ছিলাম। ঝাড়ুয়ারবিল-পদ্মপুকুরে হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর হানাদাররা বাঁশঝাড়, ফসলের ক্ষেতসহ সবস্থানে চিরুনী অভিযান চালায়। আমি বাবার সাথে সেদিন বাঁশঝাড়ে লুকিয়েছিলাম। তাদের হাতে অন্যদের সাথে আমিও ধরা পড়ি। সেদিন হয়তো ভাগ্য ভালো ছিল বলেই বেঁচে গেছি। কারণ হানাদাররা ঝাড়ুয়ার বিলের পাড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এবং অবশিষ্টদের বাড়ি থেকে ধরে এনে রেললাইনের ধারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে। যুবক, নারী ও বৃদ্ধদের তিন সারিতে বিভক্ত করা হয়। এসময় চাদর গায়ে দিয়ে আমি বৃদ্ধের সারিতে দাঁড়াই। হানাদাররা ওই তিন সারির লোকজনের মধ্যে শুধুমাত্র যুবকদের ধরে নিয়ে ট্রেনে চড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। যুবকদের ভাগ্যে সেদিন কি ঘটেছে তা আজো জানতে পারিনি।’ ওই এলাকার মোতালেব হোসেন বলেন, ‘আমার বাবাকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমি মায়ের গর্ভে ছিলাম। আজ আমি সন্তানের বাবা। সন্তানরা আমাকে বাবা বলে ডাকে। কিন্তু আমার এমনই ভাগ্য যে আমি কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারলাম না।’

   

রাইজিংবিডি/রংপুর/ ১৭ এপ্রিল ২০১৭ /নজরুল মৃধা/টিপু