সাতসতেরো

সামান্য উপহারে কেঁদেছিলেন মা

শাহিদুল ইসলাম : ট্রেভর ওয়ালেস। সান জোস স্টেট ইউনিভার্সিটর স্নাতকের ছাত্র। বাইশ বছর বয়সী এই তরুণ তার বয়সী আর দশটা তরুণের মতো প্রতি বছর মা দিবসে তার মাকে শুভেচ্ছা জানায়, চকোলেটসহ নানা রকম উপহার দেয়। তার মা হাসি মুখে উপহার গ্রহণ করলেও ওয়ালেস খুব ভালো করেই জানে, মা দিবসের এসব সাধামাটা উপহার তার মাকে খুব বেশি উচ্ছ্বাসিত করেনা। ২০১৫ সালের মা দিবসের আগে ওয়ালেস ভাবছিলেন এবার মাকে সে এমন একটা উপহার দিবে যেন উপহারটি পেয়ে তার মা অত্যন্ত খুশি হয়। হোক না সেটি ক্ষুদ্র তবে তা যেন হয় তার মনের মতো। হ্যাঁ, ওই বছর মা দিবসে ওয়ালেসের খুব সামান্য  উপহার পেয়ে খুশিতে কেঁদেছিলেন তার মা। চলতি বছর মা দিবসের প্রাক্কালে ওয়ালেস রিডার্স ডাইজেস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন তার সেই সামান্য উপহারের গল্প। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের কুপারটিনো এলাকায় অবস্থিত ডি এনজা কমিনিউনিটি কলেজ। এই কলেজে শারিরীকভাবে অক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দানের পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তার দাদি। স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৯৯ সালে মাত্র ঊনষাট বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যানসারে মারা যান মেরিলিন রসিনথাল নামের এই নারী। তার স্মৃতি রক্ষার্থে তার সহকর্মীরা মিলে স্কুল প্রাঙ্গণে একটি ঝরনা তৈরি করেন। ‘হার্টস গার্ডেন’ নামের অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন এই ঝরনাটির ঠিক মাঝখানে একটি পরীর মূর্তি বসানো হয়। এই ঝরনাটি ওয়ালেসের মায়ের খুব প্রিয় ছিল। ছোটবেলায় ওয়েলেস দেখত তার মা খুব সকালে উঠে স্কুল প্রাঙ্গণের এই ঝরনাটি নিয়মিত পরিষ্কার করত। কিন্তু ওয়ালেস ও তার মা এখন থাকেন ভিনটোরা কাউন্টিতে। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার এই কাউন্টি ডি এনজা কমিনিউনিটি কলেজ থেকে সড়ক পথে প্রায় ছয় ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। আর কালের আবর্তে স্কুলে তার দাদির সঙ্গে যারা শিক্ষক হিসেবে ছিলেন তারাও সবাই অবসর নিয়েছেন। ফলে ঝরনাটিকে আগের মতো আর কেউই যত্ন নেয় না। অযত্নে অবহেলায় চকচকে ঝরনাটি বিবর্ণ হয়ে পড়ে। চারিদিকে আগাছায় ভরে যায়। কে বা কারা যেন তার নিচের অংশটি ভেঙে ফেলে।

এভাবে সময় গড়িয়ে যায়। ২০১৩ সালে স্কুল কর্তৃপক্ষ ঝরনাটি সংস্কার কাজে হাত দেয়। কাজ চলাকালীন সময়ে ওয়ালেস তার মায়ের সঙ্গে ঝরনাটি দেখতে এসেছিলেন। তারা ঝরনাটির পাশে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে কয়েকটি ছবিও তোলেন। এরপর আরো দুই বছর কেটে যায়। ২০১৫ সালের মা দিবসের আগে তার মাথায় ঘুরতে থাকে, এ বছর মা দিবসে সে তার মাকে এমন একটি উপহার দিবে যেটি সাধারণ হলেও তার মায়ের কাছে যেন হয় অসাধারণ। কি দেওয়া যায়, এই চিন্তায় ওয়ালেস যখন একেবারেই দিশেহারা তখনই তার মাথায় আসে তার মায়ের প্রিয় ঝরনাটির কথা। সে সিদ্ধান্ত নেয় মায়ের এই প্রিয় ঝরনাটি সে পরিষ্কার করবে যেমনটি তার মাকে সে ছোট বেলায় করতে দেখতো। যেই ভাবা সেই কাজ। ভিনটোরা কাউন্টিতে থেকে ছয় ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করে সে পৌঁছে যায় ডি এনজা কমিনিউনিটি কলেজে। সঙ্গে নিয়ে যায় একটি ক্যামেরা, ট্রাইপড (ক্যামেরার স্ট্যান্ড) এবং পরিষ্কার করার জন্য স্পঞ্জ। ঝর্ণাটির কাছে পৌঁছে সে দেখে অযত্নে ঝরনাটি আবার আগের মতো জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। পানির ফোয়ারাটি পুরোপুরি নষ্ট। ওয়ালেস পাশের দোকান থেকে কয়েক বোতল পানি কিনে আনে। এরপর স্পঞ্জ দিয়ে ঝরনাটি ঘষে পরিষ্কার করে এবং কয়েকটি ছবি তোলে। রিডার্স ডাইজেস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ওয়ালেস বলেন, আমি যখন ঝরনাটি পরিষ্কার করছিলাম তখন আশেপাশের লোক সম্ভবত আমাকে পাগল ভেবেছিল। কিন্তু আমি জানি আমি কি করছিলাম। তিনি আরো বলেন, ঝরনাটি পরিষ্কার করার সময় আমার বার বার দাদির কথা মনে পড়ছিল। অনেক পরিশ্রমের পর ঝরনাটি আগের অবস্থায় ফিরে আসে। মা দিবসের দিন ওয়ালেস প্রথমে তার মাকে শুভেচ্ছা জানায়। এরপর ই-মেইলের মাধ্যমে ছবিগুলো পাঠিয়ে দেয় তার মায়ের কাছে। ছবিগুলো পাওয়ার পর তার মা আনন্দে কাঁদতে শুরু করে। কারণ সে নিজে কাজটি একসময় অতি যত্নের সঙ্গেই করতো কিন্তু এখন তা পারেন না। অথচ তার সন্তান তার অতি প্রিয় এই কাজটি করেছে যা তাকে শুধু আনন্দিত করেনি তার কাছে মনে হয়েছে এটিই মা দিবসের সবচেয়ে বড় উপহার। তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ মে ২০১৭/ফিরোজ