সাতসতেরো

পানি পার ১০ টাকা (ভিডিও)

আহমদ নূর : রাজধানীতে বুধবার সকাল থেকেই টানা মুষলধারে ‍বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা শহরের গলি থেকে শুরু করে মূল সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় ঘর থেকে বের হয়ে কোথাও যাওয়ার ফুরসত নেই। আজ রাজধানীবাসীর সকালের ঘুমটা সুখের হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তি শুরু হয়। কর্মস্থল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার সময় হতে হতেই বৃষ্টি রূপ নেয় দুর্ভোগে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মস্থল- সবখানে যেতে জলাবদ্ধতার বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে সবাইকে। তবে এ দিনে ভ্যানে করে জলাবদ্ধ জায়গা পার করে বেশ উপার্জন করেছেন কিছু ভ্যানচালক। বাড়তি আয়ের আশায় কিছু সময়ের জন্য তারা এ কাজে যোগ দিয়েছেন। বৃষ্টিতে ভিজে অন্যকে পার করছেন। সামান্য কিছু টাকা খরচ হলেও এতে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ধানমন্ডি ১৫ নম্বর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানির নিচে তলিয়ে গেছে স্টাফ কোয়ার্টার, ঝিগাতলা রোড ও ধানমন্ডি ১৫ নম্বর যাওয়ার রাস্তা। এ কারণ ওই সড়ক দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সীমিত আকারে চলছে কিছু রিকশা। ফলে কোমর পরিমাণ জলাবদ্ধতা ঠেলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য ভ্যান গাড়িতে করেই অনেকে রাস্তা পার হচ্ছেন। দেখা গেছে, ‘পানি পার ১০ টাকা’, ‘১৫ নম্বর ২০ টাকা’ বলে যাত্রীদের ডাকছেন ভ্যানচালকরা। এতে তারা সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। মুহূর্তেই তাদের ভ্যান ভরে যাচ্ছে যাত্রীতে। এমনকি বৃষ্টিতে ভিজেও যাত্রীরা ভ্যানে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছেন। ভ্যানচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা অন্য কাজ করেন। তবে বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে গেলে তারা ভ্যানে করে মানুষদের পানি পার করেন। এতে তারা প্রতি ট্রিপে ৮০ থেকে ১২০ টাকা উপার্জন করতে পারেন। দিনে ২০ থেকে ২৫ ট্রিপ দেওয়া যায়। হাতেমবাগ মসজিদ গলিতে থাকেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থী আপেল মাহমুদ। তিনি বলেন, বেলা ১২টায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছিল। সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় বের হওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস মিসও করা যাবে না। তাই বাসা থেকে বের হয়ে অন্য একটি রাস্তা দিয়ে রায়েরবাজার হাই স্কুলের সামনে যাই। সেখানে থেকে ভ্যানে করে পানি পার হচ্ছি। পানি পার হলে ১০ টাকা দিতে হবে। তিনি বলেন, অটোরিকশা চলছে না। রিকশাও সীমিত। তাই ভ্যানই ভরসা। অন্তত একটি পরিবহন তো পাওয়া গেল। সাইমুন সুমন নামের একজন রায়ের বাজার স্কুল থেকে ধানমন্ডি ১৫ নম্বর যাবেন। তিনি বলেন, ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে রিকশায় যেতে  ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। অথচ ভ্যানে করে গেলে ২০ টাকা লাগছে। তারা বিপদের সময় পানি পার করছে, আবার বাড়তি ভাড়াও নিচ্ছে না। তাদের এ উদ্যোগ ভালো লাগছে। ভ্যানচালক মো. সাদ। নিয়মিত শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন গাউছিয়া মার্কেটে। সকাল থেকে বৃাষ্টি হওয়ায় কাজে না গিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে ভ্যান চালাচ্ছেন। মো. সাদ বলেন, প্রতি ট্রিপে ৮০ থেকে ১২০ টাকা ওঠে। কোনো কোনো সময় আরো বেশি হয়। ২০ থেকে ২৫ ট্রিপের বেশি দেওয়া যায় না, কষ্ট হয়। যা আয় হয় তার কিছু ভ্যানের মালিককে দেব। বাকিটা আমরা দুজন ভাগ করে নেব। তিনি আরো বলেন, পানির মধ্যে ভ্যান চালানো অনেক কষ্টের। তারপরও ভ্যান চালাই। এতে মানুষের উপকার হলো, আমাদেরও কিছু আয় হলো। ভিডিও :

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৭/নূর/রফিক