সাতসতেরো

তারা সূর্য উঠতে দেখেন স্বপ্নের বাংলাদেশের

মামুনুর রশিদ রাজিব : যাদের বুকে ৫৬ হাজার বর্গমাইল স্বপ্ন ছিল তারা তো এ দেশকে নিয়ে আশাহত হতে পারেন না। তারা পূর্ব দিগন্তে আজও সূর্য উঠতে দেখেন স্বপ্নের বাংলাদেশের। তারা ছুটে বেড়াতে চান দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে- শোনাতে চান গৌরবগাথা বিজয়ের সঠিক ইতিহাস। গড়ে যেতে চান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের ভিত্তি। মাইনের আঘাতে পা হারানো দুই মুক্তিযোদ্ধা সেসময়ের গল্প শোনালেন রাইজিংবিডিকে। আব্দুল মান্নান আলী আর দশ জনের মতো ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে চেয়েছিলেন   সুনামগঞ্জ দোয়ারা বাজারের আব্দুল মান্নান আলী। কিন্তু দেশ ছেড়ে কিছুদিনের জন্য ভারতের মেঘালয়ে গেলেও গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে। ২১ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে তিনি যোগ দেন ভোলাগঞ্জের ৫ নম্বর উপ-সেক্টরে। যুদ্ধ করেন চাটিবর, দলের গাঁও, বড়গ্রাম সহ আশেপাশের আরো অনেক এলাকায়। সেদিন ৭ ডিসেম্বর বিকেল চারটা, সামনা সামনি আক্রমণে যাচ্ছে মুক্তিবাহিনী। আব্দুল মান্নানের দায়িত্ব ছিল আরেক সহযোদ্ধার সঙ্গে বটগাছে অবস্থান নিয়ে আক্রমণে যাওয়া। পেছন থেকে ব্যাকআপ দেয়ার জন্য থাকবে দলের বাকি সদস্যরা। সব ঠিকঠাকই ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে গুলি আসতে শুরু করলে, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন পাক বাহিনী প্রায় তাদের দুজনকে ঘিরে ফেলেছে। প্রাণপণ চেষ্টা করে পাক হানাদার বাহিনীর রাইফেলের গুলি থেকে বাঁচতে সক্ষম হলেও, রক্ষা পাননি পাকদের পুঁতে রাখা মাইনের হাত থেকে। মাইনের আঘাতে ডান পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আব্দুল মান্নানের। তাকে ভর্তি করা হয় শিলং এর একটি হাসপাতালে। এক সময় দেশ স্বাধীন হয়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দেশে ফিরে আসেন বাঙালির এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন মোহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে। অনীল কুমার রায় ফুলবাড়ি দিনাজপুরের আরেক মুক্তিযোদ্ধা অনীল কুমার রায় ছিলেন ১৮ বছরের টগবগে যুবক। ৭ নম্বর সেক্টরে যোগদানের আগে তিনিও ২১ দিনের প্রশিক্ষণের কাজটা সেরে নিয়েছিলেন ভারতের উত্তর দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ডাঙ্গারহাট থেকে। শিখে নিয়েছিলেন, বাঙালিদের ব্যবহৃত প্রায় সকল অস্ত্রশস্ত্র। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরে। কিন্তু বিবেকের তাড়না তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। তাই তিনি পালিয়ে থাকতে পারেননি। দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন জলপাইতলী, মাচুয়াপাড়া, ভবানীপুরসহ দিনাজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে। কখনো সম্মুখ যুদ্ধ, কখনো গেরিলা যুদ্ধের মুখোমুখি হয়েছেন। কখনো দুজন পাক মিলিটারিকে ধরাশায়ী করে মুহূর্তেই উধাও হয়ে গেছেন, কখনোবা রাতের অন্ধকারে নদীর পানিতে ডুব দিয়ে এসে পাক মিলিটারি ক্যাম্পে গ্রেনেড ছুড়ে জলে মিশে গেছেন। কিন্তু যুদ্ধের প্রায় শেষের দিকে, মাইনের একটা আঘাত নিয়ে চলে যায় তার ডান পায়ের সবটুকু। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন মোহাম্মদপুরের মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারে। পা না থাকলেও, স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসে দাপিয়ে বেড়ান স্মৃতিসৌধ কিংবা শহীদ মিনারে। উদ্দেশ্য একটাই, মুক্তিযুদ্ধের গল্প তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া। রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ