সাতসতেরো

ইতিহাসের সাক্ষী বাংলাদেশের একমাত্র রেলওয়ে জাদুঘর

ফয়সাল উদ্দীন নীরব : রেল ভ্রমণ পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য অনেকেই রেল ভ্রমণকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। ব্রিটিশ আমল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলদেশ রেলওয়ের ইতিহাস ব্যাপক বিস্তৃত। দিন যত এগুচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগছে রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায়। কালের বির্বতনে রেলের স্টিম ইঞ্জিন এখন আর বগি নিয়ে দৌড়ায় না।   ১৮৬২ সাল হতে শুরু করা বাংলাদেশ রেলওয়ে আজ পেরিয়ে এসেছে দেড়শ’বছর। এর মধ্যে হয়েছে অনেক পরিবর্তন, রেলওয়ে প্রত্যক্ষ করেছে অনেক পালাবদল। দীর্ঘ এই পথচলায় রেলওয়ের অনেক যন্ত্রাংশ আর আগের মতো নেই। থাকার কথাও না। অনেক পরিবর্তন হয়েছে যন্ত্রপাতির। পরিবর্তনের ছোয়ার ফলে পুরোনো যন্ত্রাংশকে বাতিল বলে গণ্য করতে হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। আর এসব বাতিল হওয়া যন্ত্রাংশগুলোর ঠাঁই হয় দেশের একমাত্র রেলওয়ে জাদুঘরে। জাদুঘরটির অবস্থান বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ওয়ার্ডে। ২০০৩ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন। জাদুঘরের সম্পূর্ণ সীমানা ১২০০ একরের। জাদুঘরটি প্রায় ৪২০০ বর্গফুট এবং কাঠের তৈরি দোতলা। জাদুঘরটি দেখতে গেলে এর চারপাশের পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে। তবে হয়তো হতাশ হতে হবে বাংলাদেশ রেলওয়ের এই একমাত্র জাদুঘরটির অবস্থা দেখে। মরচে পড়া টিন ও জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে বুঝা যায় বার্ধক্যের ভারে ঝিমুচ্ছে জাদুঘরটি। আর হয়তো কিছুদিন পর টিন, কাঠগুলো খসে খসে পড়বে। জাদুঘরটির ঠিক পাশেই রয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী প্রীতিলতার স্মৃতি ধারণকারী ইউরোপিয়ান ক্লাব। জাদুঘরটিতে প্রবেশ করলেই আপনি দেখতে পাবেন রেলওয়ের যন্ত্রপাতির চার ভাগে রাখা আছে। বামদিকের গ্যালারিতে রয়েছে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে, ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে, ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ও বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন মনোগ্রাম। এছাড়া দেখতে পাবেন ডায়নামো, লোকোমোটিভ সেফটি ডিভাইস, ডেডম্যান, অ্যালার্ম বেল স্পিডোমিটার, বিভিন্ন ধরনের লাইট যেমন ঝাড়বাতি, রিনিং ল্যাম্প, গেইট ল্যাম্প, টেইল ল্যাম্প ইত্যাদি। রয়েছে রেলওয়ের গার্ডদের ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি, ক্যাপ, ডেটিং মেশিন, পিতলের ব্যাজ, গার্ডবোট, হ্যামার সহ অনেক কিছু। সংকেত বিভাগে সংরক্ষিত যন্ত্রপাতিগুলোর মধ্যে দেখতে পাবেন পয়েন্ট টাইমিং মেশিন, মোর্স কি উইথ, সাউন্ডার, আর্ক লিভার, কন্ট্রোল কি, সিগনাল আর্ম, টুলবক্স, অ্যানালগ টেলিফোন, রোডল টেলিফোন, রেডিও ট্রান্সমিটার, রিসিভার ইত্যাদি। প্রকৌশল ও ট্রাফিক বিভাগে দেখতে পাবেন ভেনসোমিটার, থার্মোমিটার, মেজারিং ক্যান, স্প্যানার সিঙ্গেল, অ্যাডেড বারটমি, মনোরেল হুইল বোরো প্যাকিং লেভেল ইত্যাদি। শত বছরের ইতিহাস বহনকারী রেলওয়ের একমাত্র জাদুঘরটির নাজুক কাঠামোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দীন জানান, ‘রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গত কয়েক দিন আগে ঘুরে গেছেন, শিগগির সংস্কার কাজ শুরু হবে।’ রেলওয়ে জাদুঘরটি শুক্রবার বন্ধ থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার খোলা থাকে, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে যারাই ভ্রমণ করতে যান রেলওয়ের ইতিহাস বিজড়িত এই জাদুঘরটি দেখে আসতে ভুলবেন না।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ