সাতসতেরো

‘দুস্থ সাংবাদিকের ভাতা আমি পাইনি’

আমিনুর রহমান হৃদয়: সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি সংবাদ সংগ্রহ করেন। সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখসহ এলাকার নানা সমস্যা, সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন পত্রিকার পাতায়। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে ধরতে কখনো তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেননি। কারো হুমকির তোয়াক্কা না করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর সংবাদপত্রের পাতায় তুলে ধরেছেন। বলছিলাম ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার প্রবীণ এক সাংবাদিকের কথা। নাম আব্দুর রহমান। পীরগঞ্জের ভোমরাদহ সরদার পাড়া গ্রামে তার বাড়ি। ৬২ বছর বয়সি প্রবীণ এই সাংবাদিক এখন পারিবারিক জীবনে নিজেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অস্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা হয় সাংবাদিক আব্দুর রহমানের। কথায় কথায় তিনি জানালেন, ১৯৭৪ সালে সাপ্তাহিক ‘নয়াযুগ’ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ‘দৈনিক উত্তরা’, ‘দৈনিক প্রতিদিন’, সাপ্তাহিক ‘জনতা’ পত্রিকায়। বর্তমানে ‘দৈনিক ঘোষণা’র পীরগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত তিনি। আব্দুর রহমান আরো জানান, ১৯৭৪ সালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন থেকে পীরগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে পত্রিকা ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন তিনি এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। কলেজে ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে দেয়াল পত্রিকা বের করেছেন।  নিজের লেখা কবিতা, গল্প ছাড়াও অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের লেখা সংগ্রহ করে দেয়াল পত্রিকায় প্রকাশ করতেন। এরপর সাপ্তাহিক ‘নয়াযুগ’ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। এলাকার বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে তা লিখে ডাকযোগে পাঠাতেন পত্রিকা অফিসে। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ঢাকা থেকে পীরগঞ্জে পত্রিকা পৌঁছাতে ৭ দিন সময় লাগতো। ৭ দিন পর নিজের লেখা সংবাদ পত্রিকার পাতায় দেখে খুবই খুশি হতেন বলে জানান এই প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি বলেন, ‘তখন নিজেই পত্রিকা বিলি করতাম। নিজেকে সাংবাদিক মনে হতো। এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করতো।’ পারিবারিক দারিদ্র্যের কারণে এইচএসসি পাস করেই থেমে যায় আব্দুর রহমানের লেখাপড়া। কিন্তু তিনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দেননি। সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে এলাকার মানুষের সমস্যার কথা তুলে লিখতে শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পত্রিকার জন্য এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপন সংগ্রহের কাজও করেছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি নিজের যৎসামান্য জমিতে ফসল আবাদ করে উপার্জিত অর্থে অস্বচ্ছলভাবেই জীবনযাপন করে আসছেন তিনি। আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি ঋণ করে। এক মেয়েকে আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে বিয়ে দিতে পারছি না। ছেলেটাকেও এইচএসসি পাস করানোর পর টাকার অভাবে লেখাপড়া করাতে পারিনি। কোথাও চাকরিও পাচ্ছে না ছেলেটা। খুব কষ্টে করেই এখন সংসার চালাচ্ছি।’ সরকার থেকে দুস্থ ও অসহায় সাংবাদিকদের ভাতা প্রদান করা হয় এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর আবেদন করেছি। আমাকে ভাতা দেওয়া হয়নি। আমার এলাকার স্বচ্ছল দুই সাংবাদিক সেই অসহায় ও দুস্থ সাংবাদিকের ভাতা পেয়েছেন। আমি ভাতা পাইনি। সাধারণ মানুষের নানা সমস্যার কথা লিখেছি। এখন আমার মতো দুস্থ সাংবাদিকের দুঃখ-কষ্টের কথা কে লিখবে?’  

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ/তারা