সাতসতেরো

অনিশ্চিত ইফতারের অপেক্ষায়

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : কেউ আছে একা, কেউ পরিবার নিয়ে। রাস্তার ধারে, ঝুপড়িতে, খোলা আকাশের নিচে বসবাস তাদের। বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তবে সবার মাঝে একটাই মিল- সবাই ভাসমান মানুষ, কারো নির্দিষ্ট কোনো ঠিকানা নেই। রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবর, ফার্মগেট, মিরপুর মাজার, সদরঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে ওদের সংখ্যা অনেক। সারা বছর খেয়ে, না-খেয়ে কাটালেও রমজান মাসে তারা রোজা রাখে। ভাগ্যে যতটুকু জোটে তাই দিয়ে সাহরি বা ইফতার করে। শরীয়তপুরের জাজিরা ইউনিয়নের খদিজা বেগম (৬০) ঝিগাতলাসংলগ্ন লেক পাড়ে বসবাস করছেন। প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ আর ভিক্ষাবৃত্তি করেই তার দিন চলে। তিনি প্রতি রমজানে ত্রিশটি রোজা রাখার চেষ্টা করেন। ইফতার কীভাবে করেন জানতে চাইলে বলেন, বিশেষ কিছু না বাবা, মানুষ যা দেয়, তাই দিয়ে ইফতার করি। মোরশেদা বেগম (৩০)। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এক মেয়ে ও এক ছেলেসহ ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে বাস করছেন। স্বামী হারুনের মৃত্যুর পর ভিক্ষাবৃত্তি আর ফুল বিক্রি করে তাদের জীবিকা চলে। মোরশেদা জানান, রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় তাদের মতো ভাসমান মানুষ রয়েছে প্রায় ৪০ জন। তিনি জানান, প্রতিদিন তিনি রোজা রাখেন। তবে ইফতারের সময় কপালে কী মিলবে জানেন না। মাঝে মাঝে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন ইফতারের প্যাকেট দিয়ে যায় তাদের। প্রতিদিন অনিশ্চিত ইফতারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

 

দশ বছরের ছেলে আল-আমিনসহ রবীন্দ্র সরোবরে থাকেন রিনা বেগম (৩৫)। ইফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ ইফতার দেয়, কেউ আবার দেয় না। ভাগ্যে থাকলে খাই, না হলে পানি দিয়ে ইফতার করি।’ একই কথা বললেন রবীন্দ্র সরোবরে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী নাছিমা বেগম (৩০), জোহরা খাতুন (২৩), রোখসানা বেগম (৩০), হালিমা বেগম (৪২) সহ অন্যরা। রবীন্দ্র সরোবর থেকে কলাবাগানের দিকে যেতে ফুটওভার ব্রিজ অতিক্রম করলেই রাস্তার পাশে চোখে পড়ে পলিথিনে তৈরি কিছু ঝুপড়ি। রাস্তার পাশে ভিক্ষা পাওয়ার আশায় বসে আছে ক্ষুধার্ত মানুষ। অথচ তাদের মাথার উপরে গাছের সঙ্গে সাঁটা রঙিন সাইনবোর্ড ‘ভিক্ষুক মুক্ত এলাকা’।

 

ইফতার নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা জানতে চান, তাদের জন্য কী এনেছি? কোনো খাবার দেয়া হবে কিনা? একজন বলল, সাহরির খবর তো কেউ লয় না, সবাই ইফতারের খবর লইতে আসে। সাহরি না খাইলে রোজা রাখুম ক্যামনে? কলাবাগান বাস স্টেশনসংলগ্ন লেক পাড়ে চার বছর ধরে বাস করেন সাবেরা খাতুন (৬০)। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ। বন্যার কারণে অভাব অনটনে পড়ে তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন। সাবেরা খাতুন বলেন, বাবারে যে দিন পাই সেদিন খাই। যে দিন পাই না, সেদিন আল্লাহরে ডাকি। পথ চেয়ে থাকি প্রতিদিন। কে ইফতার দিয়া যাবে? রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ জুন ২০১৮/ফিরোজ/তারা