সাতসতেরো

ফুলের সমারোহ গদখালীতে

খালেদ সাইফুল্লাহ : দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। দৃষ্টি যত দূর যায় শুধুই ফুল। কোথাও গোলাপ, কোথাও রজনীগন্ধা, কোথাও গাঁদা ফুল। ফুলের পরে ফুল, কোথাও কমতি নেই! এমন দৃশ্য যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন জুড়ে। গোধূলি বিকেলে গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে হাঁটলে ফুলের সাম্রাজ্য খ্যাত এই অঞ্চলের ফুল ক্ষেতগুলোর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবে যেকেউ। গোলাপের সৌন্দর্য আর রজনীগন্ধার মন মাতানো গন্ধ- দুয়ে মিলে যেন স্বর্গীয় পরিবেশ। তাইতো এই ফুল দেখতে আর ফুলের সমুদ্রে নিজেকে ডুবিয়ে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হবার জন্য প্রতিদিন দূর দূরান্ত থেকে মানুষের আনাগোনা চলে এখানে। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী, কিন্তু বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী হিসেবে পরিচিত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী। প্রতিদিন সকাল ৭টায় বসে ফুলের হাট এবং ফুল কেনাবেচা চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এসময়ের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয় এই হাটে। পড়ন্ত বিকেলে শুরু হয় ফুল চাষিদের ফুল সংগ্রহের কাজ। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফুল সংগ্রহের পর রাতভর চলে সেগুলো বাজারজাতের প্রস্তুতি। ভোর সকালে সেই প্রাচীন আমলের গরুর গাড়ি কিংবা ভ্যানগাড়িতে করে ফুল নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের হাট গদখালীতে। ঝিকরগাছা উপজেলার চারটি ইউনিয়ন পানিসারা, গদখালী, নাভারন ও নির্বাসখোলা এবং শার্শা থানার কয়েকটি গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এখানকার প্রায় চার হাজার একর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আহবায়ক মো. ফারুক হোসেনের দেওয়া তথ্যমতে, এই এলাকায় ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি চাষি। এসব চাষিদের দুই তৃতীয়াংশই সম্পূর্ণভাবে ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও এ অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহের জন্য ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলে চাষকৃত ফুলের মধ্যে রয়েছে- কয়েক প্রকার রজনীগন্ধা, বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, কাঠবেলী, জার্বেরা প্রভৃতি। তবে গোলাপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গোলাপ লিংকন, আবার বিভিন্ন রঙের গ্লাডিওলাসের মধ্যে পিংক রঙের গ্লাডিওলাসের চাহিদা বেশি। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া গদখালী ফুলের হাটে ফুল ব্যবসার সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত রয়েছে প্রায় ১৫০ জন ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ফুলের ব্যবসা করছে। এখানকার ফুলের প্রধান ক্রেতা ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা শহরের ফুলের বাজারগুলোতেও এখাকার ফুলের চাহিদা সর্বাধিক। শীতকালই ফুল চাষের জন্য সর্বোত্তম সময়। তাই এই সময়েই ফুলের উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। তাই এসব দিবসের পূর্বমূহূর্তে এখানকার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী উভয়েরই ব্যস্ততা বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্যভাবে। এখানকার ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হয় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে, তারপরই রয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস। তবে ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এবং পয়লা ফাল্গুনেও ফুলের ব্যবসা থাকে তুঙ্গে। তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার হওয়া সত্ত্বেও এখানকার ব্যবস্থাপনা এবং ফুল পরিবহন এখনও সেই পুরাতন পদ্ধতিতেই হয়ে আসছে। এ ব্যপারে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আহবায়ক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ফুল অনেক স্পর্শকাতর হওয়ায় এটির প্যাকেজিং, সংরক্ষণ ও পরিবহন পদ্ধতির আরো বেশি আধুনিকায়ন জরুরি। এছাড়াও ফুল চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে পণ্যের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাজারের জায়গার পরিসর বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ফুল পরিবহনের পুরাতন পদ্ধতি ছেড়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাভার্ড ভ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় চাষি ও ব্যবসায়ী উভয়েই ফুল চাষ ও ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। পড়ুন :  রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ