সাতসতেরো

নীল দাড়ি সুঁইচোরা

শামীম আলী চৌধুরী: নীল দাড়ি সুঁইচোরা Nyctyornis athertoni পরিবারভূক্ত একটি পাখি। আমাদের দেশে মূলত চার প্রজাতির সুঁইচোরা দেখা যায়। তার মধ্যে Blue bearded Bee eater বা নীল দাড়ি সুঁইচোরা এক প্রজাতির পরিবার। কপাল নীল ও গলা সবুজ এই পাখির দৈর্ঘ্য ৩৪-৩৬ সে.মি. ও ওজন আকার ভেদে ৮৫-৯০ গ্রাম। নীল কপাল ছাড়াও এদের পিঠ সবুজাভ। নীল বর্ণের লম্বা লোম বা পালকগুলো দাঁড়ির আকৃতি নেয় বলেই এদের নীল দাড়ি সুইচোরা বলা হয়। এজন্যই এদের নামের সঙ্গে নীল দাড়ি শব্দটা সার্থক। গলা ও বুক কালচে নীল রঙের হয়। পেটে হলুদাভ ডোরা ডোরা দাগ থাকে। লেজ লম্বা ও তার বাহিরের পালক হলুদাভ দেখায়। উড়ার সময় লেজ ত্রিকোণাকার ও ডানার নীচে হলুদাভ দেখায়। যা পাখিটিকে আকর্ষণীয় করে। এদের ঠোঁট বাঁকা ও বাদামী। ঠোঁটের নিচের দিকটা ধূসর। চোখ উজ্জ্বল সোনালী-কমলা বর্ণের হয়ে থাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দাড়ি থাকে না। নীলদাড়ি সুইচোরা চির সবুজ বনে থাকে। বনের মধ্যে পানির স্রোতধারা ও বনের আবাদযোগ্য জমিতে বিচরণ করে। আবার অনেক সময় পাতাঝরা অপ্রধান বনেও দেখা যায়। এরা লোকালয়ে আসে না। সচরাচর একা থাকতে পছন্দ করে। মাঝে মাঝে জোড়ায় জোড়ায়  ঘুরে বেড়ায়। এরা বৃক্ষচারি পাখি। উঁচু গাছের ডালে বসে থাকে ও বাতাসে উড়ে শিকার ধরে।  এরা পতঙ্গভুক পাখি। এদের খাবার তালিকায় বোলতা, মৌমাছি, গুবরে পোকা, ফড়িং ও ফুলের মিষ্টি রস সবচেয়ে পছন্দের। সচরাচর কর্কশ গলায় ডাকে। কর..রর..রর কর..রর শব্দে ডাকে। সুরে তেমন কোনো মাধুর্য নেই।

 

এদের প্রজননের সময় ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত। নিজেরা বনের পাশে জলধারার পাড়ে বা পাহাড়ের পলি মাটিতে ২.০ থেকে ৩.০ মিটার দৈর্ঘে্যর সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায়। সেই বাসাতেই ৪-৬টি ডিম দেয়। পুরুষ ও মেয়েপাখি সম্মিলিত ভাবে ডিমে তা দেয়। নীলদাড়ি সুইচোরা  বাংলাদেশে দুর্লভ আবাসিক পাখি। চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের চিরসবুজ বনে পাওয়া যায়। তবে সংখ্যায় কম। এ ছাড়াও ভারত, ভুটান, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এদের বিচরণ বৈশ্বিক বিস্তৃত রয়েছে। বাংলা নাম: নীল দাড়ি সুঁইচোরা ইংরেজি নাম: Blue bearded Bee eater বৈজ্ঞানিক নামঃ ঘুপ: Nyctyornis athertoni. ছবি: লেখক রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুন ২০১৯/হাসনাত/তারা