সাতসতেরো

‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে’

শাহ মতিন টিপু : `যশোরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ তীরে জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজ নারায়ণ নামে জননী জাহ্নবী।' এই চরণে যার নাম লুকিয়ে আছে, তিনি মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

তার সমাধি ফলকে আজো জ্বলজ্বল করছে- ‘দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে; তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এ সমাধিস্থলে (জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত্ত দত্ত-কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসুদন।’

তিনি বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘মেঘনাদবধ’ কাব্য নামক মহাকাব্য। এই মহাকবির ১৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

মাইকেল মধুসূদন স্মৃতি ভাস্কর্য যশোর শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে সাগরদাঁড়িতে কবির জন্মভিটায় স্থাপিত। যা সাহিত্য পিপাসুদের কাছে মধুকবির স্মৃতি ভাস্কর্য হিসেবে আজো সমাদৃত।

তিনি সকলের কাছেই ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে বরেণ্য।

‘মেঘনাদবধ’ মহাকাব্য ছাড়াও এই মহাকবির উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো- ‘দ্য ক্যাপটিভ লেডি’, ‘শর্মিষ্ঠা’, ‘কৃষ্ণকুমারী’ (নাটক), ‘পদ্মাবতী’ (নাটক), ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’, ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’, ‘হেকটর বধ’ ইত্যাদি।

মাইকেল মধুসূদনের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন।

এই সাগরদাঁড়িতে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তার জন্ম। বলা হয়, সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শষ্য সম্ভারে সম্বৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়ির পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিণত যুবক হয়ে উঠেন। কপোতাক্ষ নদ আর মধুসূদনের দু’জনার মধ্যে গড়ে উঠে ভালবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন।

মধুকবি যখন জন্মগ্রহণ করেন সে সময়ে আজকের এই মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদ কাকের কালো চোখের মত স্বচ্ছ জলের জোঁয়ার ভাটায় ছিল পূর্ণযৌবনা। নদের প্রশস্ত বুক চিরে ভেসে যেত পাল তোলা সারি সারি নৌকার বহর আর মাঝির কন্ঠে শোনা যেত হরেক রকম প্রাণ উজাড় করা ভাটিয়ালী গান। শিশু মধুসূদন এ সব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখতেন আর মুগ্ধ হতেন।

স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষকে তিনি বিদেশ-বিভূঁইয়ে গিয়ে ভুলে যাননি। কপোতাক্ষের অবিশ্রান্ত ধারায় বয়ে চলা জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে কবি সুদুর ভার্সাই নগরে বসে রচনা করেন বিখ্যাত সনেট কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ’। যার প্রথম লাইনে উচ্চারণ করলেন- ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে’।

মহাকবি মাইকেল মদুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতার এক হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জুন ২০১৯/টিপু