সাতসতেরো

সিনিয়র-জুনিয়র বন্ধুত্বে বাধা হয়নি

মেহেদী হাসান ডালিম : জুবাইদা গুলশান আরা ও নিলুফার ইয়াসমিন টুম্পা। তারা পড়াশুনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। জুবাইদা এখন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আর তার অধীনে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন টুম্পা।

পড়াশুনার দিক থেকে জুবাইদা টুম্পার থেকে ১১ বছরের সিনিয়র। আইন পেশায়ও টুম্পার সিনিয়র তিনি। কিন্তু তারা এখন ভালো বন্ধু। একে-অপরের সুখ-দুঃখের অংশীদার। বয়সের ব্যবধান বা আইন পেশায় সিনিয়র-জুনিয়র তাদের বন্ধুত্বের পথে বাধা হতে পারেনি। একে-অপরকে বোঝার ক্ষমতা ও পারস্পরিক বিশ্বাস নিয়ে দু’জন ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন।

বন্ধু দিবস উপলক্ষে জুবাইদা গুলশান আরা ও নিলুফার ইয়াসমিন টুম্পা তাদের ভাবনাগুলো রাইজিংবিডির কাছে তুলে ধরেছেন।

জুবাইদা গুলশান বলেন, ‘টুম্পার স্বামী ড. নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া ইমন আমার সহপাঠী। তিনি এখন ঢাবির আইন বিভাগের অধ্যাপক। সেই সুবাদে ৭ বছর আগে আমাদের পরিচয়। আমাদের অনেক জায়গায় মিল রয়েছে। এই ধরেন, আমরা দু’জনই ভিকারুন্নেসার স্টুডেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও একই বিষয়ে পড়েছি। আবার উভয়ের শ্বশুর বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা। আসল কথা কি হলো, টুম্পা আমার অধীনে জুনিয়রশিপ শুরু করার পর থেকে সারাদিন আমাদের একসঙ্গেই কাটে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পেশায় কিন্তু অনেকেই সিনিয়রের কাছে সব কথা বলতে একটু সংকোচ বোধ করে, ভয় পায়। আমি প্রথম থেকেই টুম্পার সাথে সহজ হওয়ার চেষ্টা করেছি। এক কোর্ট থেকে অন্য কোর্টে টুম্পাকে সাথে করেই নিয়ে যাই। শুধু যে আইন, মামলা নিয়ে পড়ে থাকি তা কিন্তু নয়। কোর্ট শেষে কখনও ঘুরতে বের হই, কখনও বা ফুচকা খেতে চলে যাই। দু্’জন অনেক গল্গ করি। একে অপরের মনের কথাগুলো শেয়ার করি। আমাদের চিন্তাধারাও কিন্তু একই রকম। পছন্দ-অপছন্দ মিলে যায়। টুম্পা মেয়েটা আমার মনের কথাগুলো বলার আগেই বুঝতে পারে। এভাবে চলতে চলতে কবে যে ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছি, বুঝতেই পারিনি।’  

জুবাইদা মনে করেন, বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখা। বন্ধু যেন আরেক বন্ধুর কাছে কোনো কথা বলতে দ্বিধা বা সংকোচ বোধ না করেন সেই আস্থাটা অর্জন করা। বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে কোনো বিনিময় ছাড়াই একে-অপরকে ভালোবাসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

নিলুফার ইয়াসমিন টুম্পা বলেন, ‘গুলশান আপুর কাছে যখন জুনিয়রশিপ করার সিন্ধান্ত নেই, প্রথম প্রথম মনে করেছিলাম আপু কেমন যে হবে। সব কথা বলতে পারবো? কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই আমার সে ভুল ভেঙ্গে গেল। সিনিয়র হিসেবে আপু আমাকে হাতে-কলমে শিক্ষা দেন। আমি সব ধরনের প্রশ্ন করতে পারি। আমার খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব বিষয়ে নজর রাখেন আপু। আমার অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে দেন। কোর্ট অঙ্গনে আমাকে আগলে রাখেন। কোনো কারণে মন খারাপ হলে আপুর সাহচর্য মন ভালো হয়ে যায়। অনেকেই বলে তুমি অনেক ভাগ্যবতী। যখন আমরা একসঙ্গে চলাফেরা করি অনেকেই বলে তোমরা কি মা-মেয়ে? আবার কেউ বা আমাদের আপন বোন মনে করেন। আইন পেশায় সিনিয়র-জুনিয়রের যে এত ভালো সম্পর্ক হতে পারে এটা বিশ্বাসই করতে চায় না।’

টুম্পা আরো বলেন, ‘আমার সিনিয়রের মধ্যে জুনিয়রকে শেখানোর যে মানসিকতা ও ভালোবাসা তা সত্যিই বিরল। আসলে গুলশান আপু শুধু ভালো সিনিয়র নয়, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/০৪ আগস্ট ২০১৯/মেহেদী/হাকিম মাহি