সাতসতেরো

প্রজননকালে আকর্ষণের জন্য বিচিত্র ডাক

সাতছড়ি বন মানেই সবুজের ছড়াছড়ি যা প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কেড়ে নেয়। নানা প্রজাতির গাছ আর পাখির ডাকে মন ভালো হওয়ার আবেশ তৈরি হয়। বিশেষ করে ভোরের আলো যখন ঘন বনের ফাঁক গলে নেমে আসে শিরশির বাতাস আর পাহাড়ি ফুলের গন্ধে মন মাতাল হয়ে ওঠে। যে কারণে ছুটে যাই বারবার।

গত মাসে হঠাৎ পরিকল্পনা হলো সাতছড়ি যাওয়ার। কথা হলো কিসমত খোন্দকার ও নাজিম আহমেদের সঙ্গে। এককথায় তারা রাজি হয়ে গেলেন। বৃহস্পতিবার রাতে মহাখালী থেকে এনা বাসে চেপে রওয়ানা হলাম। ভোর ৫টায় আল-আমিন হোটেল সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পে নামলাম। এখানে খুব ভোরে সিএনজি অটোরিকশা পেতে অসুবিধা হয় না। অটোরিকশা ভাড়া করে হোটেলে নাস্তা শেষে বনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। ভোর ৬-১৫ মিনিটে বনের প্রধান ফটক দিয়ে বনে ঢুকলাম। কিছুটা পথ হাঁটার পর শুকিয়ে যাওয়া পাহাড়ি ছড়ার ওপারে হঠাৎ নজরে এলো একটি মায়া হরিণ কুয়াশা ভেজা ঘাস খাচ্ছে। খুব অল্প সময় পেলাম। তার মধ্যেই কয়েকটি ছবি তুললাম। এরপর আমরা সাতছড়ি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে গেলাম।

ভোরের আকাশ। পুবদিকে সূর্যের আলো বনটিকে সোনালী আলোয় পরিপূর্ণ করে তুলেছে। চারদিকের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখছি। এমন সময় টাওয়ার থেকে দূরে বড় একটি গাছের ডালে কয়েকটি পাখি বসলো। কিন্তু সেগুলো কি পাখি খালি চোখে বুঝা যাচ্ছিল না। দূরবীন দিয়ে পাখিগুলো দেখে বুঝতে পারলাম এগুলো ধুমকল পাখি। সকালের রোদে নিজেদের তাতিয়ে নিচ্ছিল বলে বেশ কিছুটা সময় পেলাম। ছবিও তুললাম অনেকগুলো। তবে পাখিগুলো টাওয়ার থেকে অনেকটা দূরে ছিল।

ধুমকল Ducula গণের Columbidae পরিবারের ৪৫ সে.মি. দৈর্ঘের বড় আকারের বৃক্ষচারী ফলভুক পাখি। ওজন ৫০০ গ্রাম। মাথা ও ঘাড় ধূসর বর্ণের। ডানা, পিঠ ও লেজ উজ্জ্বল ধাতব সবুজ রঙের। বুক ও পেট ধূসর। লেজের তলা তামাটে। চোখ গাঢ় লাল। এদের ঠোঁট বহু রঙের হয়। গোড়ার অর্ধেক বেগুনী-লাল, মধ্যভাগ নীলচে-সাদা ও সামনের অংশ সাদা। পা ও পায়ের পাতা লাল। নখ লালচে-বাদামী। পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

ধুমকল চিরসবুজ বনে বিচরণ করে। এরা জোড়ায় বা একা থাকে। ফলযুক্ত গাছের উঁচুতে খাবার খুঁজে খায়। ফল খুব প্রিয় খাবার। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে নানান জাতের বনজ ফল। মাঝে মাঝে এরা নোনা মাটি ও পানির জন্য মাটিতে নামে। এরা দ্রুত উড়ে চলাফেরা করে। উড়ার সময় পতপত আওয়াজ হয়। এদের প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন মাস। প্রজননকালে পুরুষ পাখিটি মেয়েটিকে আকর্ষণ করার জন্য নানা ভঙ্গিমায় ডাকে ও মাথার সাদা চাঁদি বারবার নত করে মেয়েটির সামনে প্রদর্শন করে। এরা পাতাযুক্ত বনজ গাছ দিয়ে ছোট বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখিটি ২টি ডিম পাড়ে। নিজেরাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়।

ধুমকল বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের সবুজ বনে মাঝে মাঝে দেখা যায়। এ ছাড়া ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচরণ রয়েছে।

বাংলা নাম: ধুমকল

ইংরেজি নাম: Imperial Pigeon

বৈজ্ঞানিক নাম: Ducula aenea

লেখক ছবিগুলো সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে তুলেছেন। ঢাকা/হাসনাত/তারা