সাতসতেরো

নতুন চমক নিয়ে ‘জোকারস ক‌্যারাভান’

অনলাইনে হর-হামেশায় খাবার অর্ডার করেন মাইশা (ছদ্মনাম)। ‘জোকারস ক‌্যারাভান’ নামের এক নতুন পেজে খাবার অর্ডার করেছেন তিনি।

খাবার হাতে নেবার জন‌্য বাসার দরজা খুলে অবাক মাইশা।

রীতিমতো চমকে গেছেন তিনি। কারণ খাবার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক আস্ত জোকার।

পরম মমতায় এক গাল হাসি দিয়ে সেই জোকার তার হাতে খাবার তুলে দিলেন।

জোকার সাজা সেই ছেলেটি আহনাফ তাহমিদ হক নাফি। তিনি জানান, তার মায়ের হাতে তৈরি পাটিসাপটা একটু ভিন্নভাবে মানুষের হাতে তুলে দিতেই তার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। খাবার হাতে পেয়ে যখন ক্রেতা মজা পায় তখনই তার এই জোকার সাজার স্বার্থকতা পরিপূর্ণতা পায়। মার-ছেলের এই জোকারস ক‌্যারাভানে দারুণ সাড়া পাচ্ছেন তারা।

‘জোকারস ক‌্যারাভান’ এর স্বত্বাধিকারী আফিয়া আক্তার একজন পুরোদস্তুর গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি ব্যাপক ঝোঁক ছিল তার। বিয়ের পর সেই আগ্রহ আরো বেড়ে যায়।

তিনি যতটা না দেখে, তার চেয়ে বেশি রান্না করে করে শিখেছেন। কিন্তু রান্নাটা তিনি করতেন শুধুই প্রিয়জনদের খাওয়ানোর জন্য।  

কিন্তু স্বামী- ছেলের অনুপ্রেরণায় রান্নার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে পাটিসাপটা বিক্রি শুরু করেন তিনি। এবং খুব অল্প সময়েই সাড়া ফেলেন রামপুরার বনশ্রীর এই গৃহিণী।

আফিয়া আক্তার বলেন, ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিন্তায় পরিবর্তন আসতে থাকে। বেশ কিছু দিন থেকে পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে খুব হীনমন্যতায় ভুগছিলাম। কারণ পরিবারটা বড় হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে খরচ। সব মিলিয়ে চাইছিলাম কিছু একটা করতে। এ নিয়ে প্রায়ই ছেলের সঙ্গে আলোচনা করতাম। একদিন ছেলে অফিস থেকে ফিরে জানালো এই ব‌্যবসার কথা। ব‌্যাস্ রাজি হয়ে গেলাম।’

আফিয়া আক্তার বলেন, প্রথম পিঠার অর্ডার পেয়েছিলাম চারজনের কাছ থেকে। তাদের দেয়া এডভান্স ৫০০ টাকা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তখন ৩০০ টাকার মত লাভ হয়েছিল। সেটা বেশ অনুপ্রেরণার কাজ করেছিল।’

এ বিষয়ে ছেলে আহনাফ তাহমিদ হক নাফি বলেন, ‘বেশ কিছু কনসেপ্ট মনে আসে। সোশাল মিডিয়া পেজ স্ক্রল করলে সামনে আসে এমন অনেক বিষয়। ভাবছিলাম মাকে কিভাবে এই জোয়ারে নিয়ে আসা যায়। এরপর মাথায় এলো মা খুব ভালো রান্না করতে পারেন। মার হাতের পাটিসাপটা যে খেয়েছে সে-ই বলেছে অনেক ভালো। এরপর অফিসে বসে ‘জোকারস ক‌্যারাভান’পেজটি রেডি করে ফেললাম। তারপর সেইদিনই নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশি গাভীর খাঁটি দুধ আর গ্রামের আতপ চাল দিয়ে সেদিনই শুরু করে দিলাম।’

আহনাফ তাহমিদ হক নাফি আরো বলেন, ‘এরপর মা পিঠা বানালেন। একবার খেয়ে একটু কোয়ালিটি চেক করে নিলাম। ব্যাস, রাত থেকেই শুরু করলাম অর্ডার নেওয়া। দুইদিনে ২০ বক্স অর্ডার কালেক্ট করে সাপ্লাই দিলাম। এরপর অর্ডার আসার পরিমাণ বাড়তে থাকে। তখন থেকে মা পিঠা বানায় আর আমি সাপ্লাই করি। সাপ্লাই করার সময় পরি জোকারের কস্টিউম। ক্রেতারা এভাবে খাবার হাতে পেয়ে বেশ মজা পায় আর আমিও ওদের হাতের মজার খাবার তুলে দিয়ে আনন্দ পাই।’

নিজের পিঠা বানানো নিয়ে আফিয়া আক্তার জানান, ছোট থেকে এমন কাজের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে রান্না করতে ভালবাসতাম সবসময় আর স্বাবলম্বী হতে চাইতাম। এই দুটো জিনিসকে কাজে লাগিয়ে কি করা যায়- সেই চিন্তা থেকেই এমন পরিকল্পনা মাথায় আসে। আর এই কাজে শুরু থেকেই তার স্বামী পাশে ছিলেন এবং তিনিই সবসময় তাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।  

ঢাকার যানজটকে এই কাজের প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে আফিয়া আক্তার জানান, অর্ডার করার পর ডেলিভারি করতে দেরি হয় জ্যামের কারণে। জ্যামে ক্রেতার নিকট খাবার দেরিতে পৌঁছালে একদিকে খাবারের স্বাদ সময়ের সাথে সাথে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ক্রেতা ঠিক সময়ে ডেলিভারি হাতে না পেয়ে বিরক্ত হন। 

স্বাস্থ্যকর এবং মানসম্মত খাবার ঘরে পৌঁছে দেবার অঙ্গীকার সবার আগে জানিয়ে আফিয়া আক্তার বলেন, আমাদের এখানে খাবারের মান নিয়ে সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করা হয়। এবং প্রতিটি উপাদান স্বাস্থ্যসম্মত। তাই ক্রেতারা নির্ভয়ে এই খাবার খেতে পারেন। আর বর্তমান বাজারে এই খাবার স্বল্পমূল‌্যে দেয়া হয়।

আহনাফ তাহমিদ হক নাফি বলেন, ‘প্রতিদিন অর্ডার আসছে। আমি চাই আমার কাছে আরও অর্ডার আসুক। কারণ অর্ডার আছে শুনলে মা খুশি হয়। মা স্বাবলম্বী হতে চায়, তার সেই যোগ্যতাটা যেহেতু আছে- তো সেটা কাজে লাগুক।’

স্বল্পমূল‌্যে পাটিসাপটা পিঠা অর্ডার করতে ভোজনরসিকরা ‘জোকারস ক‌্যারাভান’ পেজে ঢু মারতে পারেন বা 01829793903 এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। ঢাকা/বুলাকী