সাতসতেরো

শেখের কিল্লায় নেই শেখ মুজিবের স্মৃতিচিহ্ন

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর সর্বপ্রথম যে গ্রাম থেকে বঙ্গবন্ধু ‘দেশ গড়ার ডাক’ দিয়েছেন সেই গ্রামের নাম চর পোড়াগাছা। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সেই গ্রামের অবস্থান। গ্রামে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ‘শেখের কিল্লা’ ঘিরে মানুষের কত আবেগ, কত স্মৃতি!

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি এক সমাবেশের প্রধান অতিথি হয়ে সেই গ্রামে গিয়েছিলেন শেখ মুজিব। মাটি কেটে সমাবেশের মঞ্চ তৈরি করেছিলেন নেতাকর্মীরা। মাটির মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিব দেশ পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই থেকে ওই স্থানটি লোকমুখে ‘শেখের কিল্লা’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।

শেখের কিল্লার ওই সমাবেশের প্রত্যক্ষদর্শী তৎকালীন রামগতি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা শফিক কমান্ডার। সেই দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বললেন বঙ্গবন্ধুর ওই দিনের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ। তাঁর কথা অনুযায়ী শেখের কিল্লায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সমাবেত কৃষক শ্রমিক জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘দেশ আমাদেরকেই গড়তে হবে, উৎপাদন বাড়াতে হবে। স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়া ও অর্থনৈতিক মুক্তি আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে’।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে বঙ্গবন্ধু কোদাল দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা তৈরির কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। গণমানুষের অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমে ওই দিন নির্মাণ হয়েছিল দুই কিলোমিটার মাটির রাস্তা, যা এখন নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে রামগতির আলেকজান্ডার যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক।

শফিক কমান্ডার বলেন, ‘শেখের কিল্লায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই স্মৃতি ধরে রাখতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কোনো স্মৃতি স্মারক গড়ে না তুললে, তরুণ প্রজন্ম কীভাবে জানবে এখানে শেখ মুজিবের পদধূলি জমে আছে?’

স্থানীয়দের অভিযোগ, শেখের কিল্লায় বঙ্গবন্ধুর আগমনের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও, স্মৃতি ধরে রাখার বদলে এই স্মৃতি মুছে দিতে তৎপর মানুষের অভাব নেই। তবে স্থানটি চিহ্নিত করতে ২০১৩ সালে নামফলক স্থাপন করে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র (ডরপ)। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি ইতিহাস রক্ষা কমিটি’ গড়ে তোলে  স্থানীয় গ্রামবাসী। সংগঠনের আহ্বায়ক হাজী মোহাম্মদ উল্লাহ সওদাগর, শেখের কিল্লায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি অবিস্মরণীয় করে রাখতে ওই স্থানে মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্বপ্ন কমপ্লেক্স’ তৈরির দাবি জানিয়েছেন।

আশার খবর, সম্প্রতি স্থানটি পরিদর্শন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ঘোষণার  দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই। তবে একটি পক্ষ অন্যত্র শেখের কিল্লা স্তম্ভ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন মহলে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন অভিযোগে সামনে এনে মানববন্ধনও করেছে শেখের কিল্লা স্মৃতি ইতিহাস রক্ষা কমিটি। তাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধু যেখানে এসে কোদাল হাতে মাটি কেটেছেন, সেখানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ না করে, অন্য জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের যৌক্তিকতা নেই। এটা ষড়যন্ত্র।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর সেদিনের জনসভার অংশগ্রহণকারী, রামগতি থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এএইচএম নোমান রাইজিংবিডিকে বলেন, “মুজিববর্ষে শেখের কিল্লায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখের কিল্লা স্বপ্ন কমপ্লেক্স’ নির্মাণ সময়ের দাবি। এতে সঠিক ইতিহাস জানাসহ স্থানটির গুরুত্ব তৈরি হবে এবং মেঘনা নদীসহ রামগতি উপজেলা একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে উঠবে।” ঢাকা/মারুফ/তারা/নাসিম