সাতসতেরো

কোয়ারেন্টাইন শব্দের উৎপত্তি যেভাবে

কোয়ারেন্টাইন এবং করোনা, এই দুটো শব্দ এখন টক অব দ্য ওয়ার্ল্ড। বলা যায় পৃথিবীতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত এই দুটি শব্দ।

তবে করোনা শব্দটি সম্পর্কে সবাই এখন কিছু না কিছু জানে। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন মানে যে রোগের সংক্রমণ এড়াতে নিজেকে গৃহবন্দি এবং অন্যদের সঙ্গে যথাসম্ভব সংস্পর্শহীন রাখা, সে-ও আমরা সবাই জানি।

কিন্তু আপনি জানেন কি, কোয়ারেন্টাইন শব্দটি উৎস কোথায়? এই শব্দটি এলাে কোথা থেকে? 

চতুর্দশ শতকের কথা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিভিন্ন পথের অন্যতম ছিল ‘সিল্ক রুট’, যা জলপথে বিস্তৃত ছিল এশিয়া মহাদেশ থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপের গ্রিস এবং ইতালি পর্যন্ত। ১৩৪০ সালে সম্ভবত মধ্য এশিয়া থেকে এই সিল্ক রুটের বাণিজ্যপথ ধরেই ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ল এক মারণরোগ, যার শিকার হতে লাগলেন লাখ লাখ মানুষ। রোগের নাম ‘বিউবোনিক প্লেগ’। যে দুরারোগ্য ব্যাধিকে অভিহিত করা হল ‘ব্ল্যাক ডেথ’ নামে।

প্রতি দশকেই কখনও না কখনও ইউরোপে ফিরে আসত এই ভয়ঙ্কর  ‘ব্ল্যাক ডেথ’, আকার নিত মহামারির, প্রাণ যেত অগণিত মানুষের। ১৩৭৩ সালে যখন ইউরোপে ফের প্রাদুর্ভাব ঘটল এই রোগের, ইতালির বন্দরনগরী ভেনিসের প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা ঠিক করলেন, অনেক হয়েছে, আর নয়। সিদ্ধান্ত হলো, বাইরে থেকে আসা কোনও জাহাজে প্লেগে আক্রান্ত কোনও রোগী রয়েছেন, এমন সন্দেহ হওয়া মাত্রই সেই জাহাজের ভেনিসে ঢোকার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাহাজকে ভেনিসে ঢোকার আগে একটি দ্বীপে চল্লিশ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

ইতালীয় ভাষায় চল্লিশকে বলা হয় ‘কোয়ারান্তেনা’। সংক্রমণ-প্রতিরোধে ওই চল্লিশ দিনের দূরবর্তী অপেক্ষার সময়কে বলা হত ‘কোয়ারান্তিনারো’। সেই থেকেই ইংরেজি শব্দ ‘কোয়ারেন্টাইন’-এর উৎপত্তি।

নিয়তির কী নির্মম পরিহাস, মহামারির সংক্রমণ এড়াতে রোগীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার প্রথার এই উদ্ভাবনী সূচনা হয়েছিল যে দেশে, সেই ইতালিই আজ করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বে সবচেয়ে সঙ্কটাপন্ন।

কোয়ারেন্টাইন কী? 

যেসব ব্যক্তিকে আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ মনে হয়, কিন্তু সে সুস্থ হতে পারে, আবার নাও পারে, তার মধ্যে হয়তো জীবাণু আছে কিন্তু তারমধ্যে কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়নি- এমন ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে একজন মানুষকে প্রাথমিকভাবে ১৪ দিন এভাবে বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা হয়। ১৪ দিন পর্যন্ত কাউকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখলে যদি তার ভেতরে জীবাণু থাকে তাহলে উপসর্গ দেখা দেবে। কোয়ারেন্টাইন থেকে লক্ষণ প্রকাশ না হলে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলা হয়। কোয়ারেন্টাইনে রাখা অবস্থায় উপসর্গ দেখা দিলে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, রাইজিংবিডি ডটকম

ঢাকা/সাইফ/আমিনুল