সাতসতেরো

নারী মুক্তির কর্ণধার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ

সংসার যাপনে অভ্যস্ত এক সুলক্ষণা নারী আমি

গৃহকোণে কখনো হাস্যময়ী শান্ত সুশীলা

কখনো

আমি সেই আপোসহীন নারী নৌকাডুবির হেমনলিনী,

আমি মালঞ্চের সরলা, আমি গোড়ার সুচরিতা

আমিই ঘরেবাইরের বিমলা আর আমিই তোমাদের প্রিয় গল্পের প্রিয় চরিত্র নষ্টনীড়ের সেই চারুলতা,

আমি কখনো তেজস্বী রণাঙ্গিনী ল্যাবরেটরি গল্পের চরিত্র সোহিনী,

কখনো আমি সমাপ্তির মৃন্ময়ী কখনোবা রক্তকরবীর নন্দিনী,

আমি কিন্তু সবসময়ই মনেপ্রাণে রবীন্দ্রপ্রেমী

আমার জীবনচিত্রের মানসপটে জেগে উঠে সদা বিশ্বকবির গল্পগুচ্ছে বিশেষায়িত যত রূপায়িত রমণী,

মানসিকভাবে আমি দৃঢ় চরিত্রের অধিকারিণী,

রবিগুরুর হৈমন্তী গল্পের হৈমন্তীও যে এই আমি-ই,

হাসিমুখে অপমানের কন্টক শয়নে শায়িত হয়ে

প্রতিক্ষণে কেন তলিয়ে যাই এই আমি?

ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে

নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে নিজেকে দিয়েছি সঁপে অতি অবহেলায়,

আমি স্ত্রীর পত্রের মৃণাল তথা

‘বাঙাল দেশের মেয়ে’ খেতাবপ্রাপ্ত

অবজ্ঞায় জর্জরিত রবীন্দ্র অর্ধাঙ্গিনী সেই মৃণালিনী,

আমার মাঝে খুঁজে পাই অসম বয়সী স্বামীর শয্যাসঙ্গিনী রবীন্দ্রনাথের বৌঠান দেবী কাদম্বরী,

আমিই সেই অপরিচিতা গল্পের কল্যাণী,

আমি অবলম্বন চাই না,

আমি নারী মুক্তির উপায় খুঁজে খুঁজে

অবশেষে নারী মুক্তির দরবার উন্মোচিত করি,

যখন আমি রবী গুরুর পয়লা নম্বর গল্পে অনিলা নামে রূপায়িত হয়েছি,

সংসারধর্মে দায়িত্বহীনতা আর

স্ত্রী চরিত্রের প্রতি অবজ্ঞা কি করে সইবো আমি,

সে কারণেই আমি

অনিলার প্রতি স্বামীর উদাসীনতা মেনে নিতে পারিনি,

আমি নারী বলে কেন সব মুখবুঁজে সদা মেনে নিব,

আর তাইতো

আমি অনিলা সংসার ত্যাগের প্রাক্কালে

স্বামীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে গিয়েছি ‘আমার খোঁজ করো না’।

প্রকৃতপক্ষে জীবন গল্পের চৌকাঠের অভ্যন্তরে

আমি নারী কি কেবলই সংসার যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকব?

‘রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা’

এ চক্র থেকে নারীকে যে মুক্ত হতেই হবে।

নারী শুধুই কোমলতা, স্নেহ বা প্রেমের প্রতিভূ নয়,

রবীন্দ্রবিশ্বের নারীরা কেবলই পুরুষের ছায়ামাত্র নয়

বরং

সভ্যতার সংকটে,

আমি দেখেছি

নারী তখন

সমাজ কাঠামোর ভিত্তি হিসেবেই চিত্রিত হয়েছিল।

সে যুগের বাসিন্দা হয়েও রবীন্দ্র কলমের আঁচড়ে

নারী আর্শ্চয রকম অগ্রসর

বিশ্বকবির গল্পগুচ্ছের নারী চরিত্র কখনোই অবোধ নয়,

হে কবি, নারীকে তুমি সে যুগেই করেছ অনেকটা অগ্রগামী,

অনেকটাই পরিণীতা আর

দিয়েছ ভিন্নমাত্রার পরিচয়।

 

ঢাকা/শান্ত