সাতসতেরো

নিজের তৈরি প্রতিমায় বালক নিজেই পুরোহিত

নির্মাণ দত্ত দক্ষ কারিগরের মতো নিজ হাতে বানিয়েছেন দুর্গাপ্রতিমা। এমনকি পুরোহিতের কাজও করছেন শাস্ত্র মতে। এটুকু পড়ে পাঠকের হয়তো মনে হতে পারে- এ আর এমন শক্ত কি কাজ! কিন্তু বিস্ময়কর হলো- নির্মাণ দত্তের বয়স মাত্র ১৪। সে স্থানীয় এমকেসিএম পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার শিবগঞ্জ গ্রামের গোপাল দত্তের ছেলে নির্মাণের প্রতিমা তৈরির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এমনকি গুরু ধরে তিনি দীক্ষাও নেননি। অথচ এই বয়সে নিজ হাতে প্রতিমা তৈরি করে নিজেই পূজা দিয়ে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। এলাকাবাসী বলছেন, প্রতিভার কোনো বয়স নেই- নির্মাণ তারই উদাহরণ।

ছেলেবেলা থেকেই ছবি আঁকার অভ্যাস নির্মাণের। রেপ্লিকা তৈরিতে তার জুরি মেলা ভার। সাধারণ অনেক কিছুই তার তুলিতে অসাধারণ হয়ে ওঠে। নির্মাণ জানান, ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময় তার মনে প্রতিমা তৈরির ইচ্ছে হয়। এরপর থেকেই শুরু করেন অনুশীলন। ২০১৬ সালে তিনি প্রথম নিজ ঘরের বারান্দায় মাটি দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেন। প্রতিমা দেখে সবাই প্রশংসা করলে নির্মাণ বাড়ির আঙিনাতেই  মণ্ডপ তৈরি করে দুর্গাপূজা করার মনস্থির করেন।  

শাস্ত্র মেনে পূজা করা কীভাবে শিখেছেন জানতে চাইলে নির্মাণ দত্ত বলেন, ‘ময়মনসিংহ রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজের সঙ্গে কথা বলে তার অনুমতি নিয়েই আমি পূজা করি। আমি মন থেকে, ভক্তি সহকারে মাকে ডাকি। অনেকে ব্রাহ্মণ দিয়ে পূজা করার কথা বলে, কিন্তু আমার মন সায় দেয় না। আমি নিজ হাতে দেবীর মূর্তি তৈরি করবো, তার পূজা করবো- এটাই আমার ইচ্ছা ছিল। সৃষ্টিকর্তা এবং সবার আশীর্বাদে আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’

প্রতিমা তৈরিতে প্রায় এক মাস সময় লাগে জানিয়ে নির্মাণ বলেন, ‘রঙের কাজও আমি নিজে করি। এমনকি কোনো ডাইস ছাড়াই নিজ হাতে প্রতিমার মুখমণ্ডল বানাই।’  

সাধারণত প্রতিমা তৈরির কাজ হিন্দু সম্প্রদায়ের পাল বংশের লোকেরা করেন। তারাও নির্মাণের তৈরি প্রতিমা দেখে প্রশংসা করেছেন। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। নির্মাণ দত্তের পিতা গোপাল দত্ত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেবীর প্রতি ছেলের অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা দেখে আমরা সত্যিই আনন্দিত। ছেলের ইচ্ছেতেই এখন বাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি।’