লিমন আহমেদ
ঢাকা, ১৩ মেঃ আকাশের মেঘ বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ার আগেই পানিতে সাঁতার কাটেন অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা। একটুখানি মেঘের দেখা পেলেই স্ট্যাটাস আর ছবি আপলোডের বান ডেকে যায় মাধ্যমগুলোতে।
শুধু মেঘ নয়, সভ্যতার এই সময়ে যাপিত জীবনের প্রতিটি বিষয় নিয়েই অনলাইনে চলে আলোচনা-সমালোচনা আর ভার্চুয়ালি বৈঠক। বাদ যায় নি এবারের আন্তর্জাতিক মা দিবস।
প্রতি বছরের মে মাসের দ্বিতীর রোববারকে আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। আমাদের দেশেও এই দিবসটিকে উৎসবের আমেজে বরণ করা হয় এবং পালন করা হয়। প্রত্যেকের জীবনেই প্রিয় মানুষ, ভালবাসার অতি আপনজন আমাদের মা।
মায়ের প্রতি সারা বছরই শ্রদ্ধা আর সম্মানের কমতি নেই কারও। তবুও মা দিবসের বিশেষ একটি দিন মায়ের জন্য বরাদ্দ রাখার আনন্দটা একেবারেই আলাদা। এই দিনের শুরু যেমন আর দশ দিনের মত নয়, শেষটাও তেমনি ব্যতিক্রম।
এইদিন সন্তানের একটু বেশি কাছে থাকা, একটু বেশি দুষ্টুমীর যন্ত্রণা দেয়া, ছোট্ট একটা স্পর্শ, ছোট্ট একটা উপহার মায়ের মন রাঙিয়ে তুলতে পারে সাতরঙে। তাই মাকে নিয়ে মা দিবসে ভাবনার শেষ নেই সন্তানদের।
সেই ভাবনাটা কত রকম আর কত সুন্দর হতে পারে সেটা অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চোখ রাখলেই বুঝা যায়। ব্যবহারের সহজ-সাবলীলতার জন্য আমাদের দেশে বেশিরভাগ লোকই ফেসবুক ব্যবহার করেন। তাই মা দিবসের আয়োজনে ফেসবুকই ছিল সবাইকে ছাড়িয়ে-এগিয়ে।
মা দিবসের দুই-তিন দিন আগে থেকেই ফেসবুকে সবাই মা দিবসের নানা কবিতা, গান, স্ট্যাটাস, ছবির আয়োজনে ব্যস্ত। গত ১২ মে রোববার মা দিবসে ব্যস্ততার পূর্ণতা দেখা গেল। সেই এর বেশিরভাগ ছিল মায়ের সাথে স্মৃতিকথা।
অনেকেই জীবিকার তাগিদে মাকে ছেড়ে দূরে বাস করেন। তারা মায়ের জন্য বিরহ, ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা, প্রার্থনা প্রকাশ করেছেন। কেউ আবার অকাল প্রয়াত মায়ের মধুর স্মৃতি শেয়ার করেছেন অনলাইন বন্ধুদের সাথে।
অনেকে আবার মায়ের আঁচলে দেশকেই ভালবেসেছেন মায়ের মত করে। উপলব্দি করেছেন দেশমাতা আর গর্ভধারিণীর ঋণ কোনদিন শোধ করা যায় না। কেউ মায়ের জন্য কেঁদেছেন, কেউ হেসেছেন। তবে সবাই দাবী করেছেন ‘আমার মা পৃথিবীর সবার সেরা মা’।
ফেসবুকের মতই অনলাইন ব্যবহারকারীরা মায়ের জন্য ভালবাসা প্রকাশে ব্যস্ত ছিলেন টুইটার, স্কাইপি, বেশতো সহ নানা ব্লগিং মাধ্যমে। সেখানেও ছিল মাকে ঘিরে কবিতা, গান, গল্প, ছবি, স্মৃতিকথা শেয়ার-লাইকের ধুম।
সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি শোবিজের তারকা থেকে শুরু করে লেখক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, রাজনিতীবিদ, শিক্ষক, প্রকৌশলীসহ প্রায় সব পেশাজিবীরাই মা দিবসে মায়ের জন্য ভালবাসা প্রকাশে অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অংশ নিয়েছেন।
যেমন দেশ আর জননীর ভালবাসার মিশ্রণেই মা দিবসের অনুভুতি প্রকাশ করেছেন এটিএন বাংলার বার্তা প্রধান জ ই মামুন। তার স্ট্যাটাসে ছিল জাতীয় সংগীতের দুটি লাইন-মা তোর বদন খানি মলিন হলে...ও মা আমি নয়ন জলে ভাসি...
স্বনামধন্য গীতিকার জুলফিকার রাসেল মা দিবসের স্ট্যাটাসে একটা গান লিখেছিলেন। সেটার কিছু অংশ ছিল-কোনোদিন আসে না যেন সেইদিন/`মা` `মা` বলে ডেকে যাবো আমি/আর ওপাশ থাকবে নিরব, উত্তরহীন/কোনোদিন আসে না যেন সেইদিন/মাগো, তুমিহীন ভাবি না কোনোদিন....
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিনোদন সাংবাদিক জাকারিয়া সৌখিন তার মায়ের স্মৃতিকথা নিয়ে বিশাল এক স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। সেখানে মায়ের প্রতি নিজের উদাসীনতার সমালোচনা করে আত্মপ্রশ্ন করেছিলেন এভাবে-আমার খুব খারাপ লেগেছে। মনে মনে কান্না পেয়েছে। দিনে দিনে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি? কোন অতলে?
গুণী অভিনেত্রী শর্মিলি আহমেদের একাউন্টে দেখা গেছে ‘মা সন্তানের প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ট শিক্ষক’ এই কথার একটি ছবি। এছাড়াও মা দিবসে ফেসবুকে মায়ের ছবি শেয়ার করেছেন লাক্স সুন্দরি ফারিয়া। আরেক লাক্স সুন্দরি রাখি মায়ের সমর্থন আর সাহস ছাড়া এতটা পথ পাড়ি দিতে পারতেন না দাবী করে মায়ের জন্য অসীম ভালবাসার বরাদ্দ চেয়েছেন বিধাতার কাছে। সময়ের আরেক তরুন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা তার মায়ের সাথে নিজের একটা ছবি শেয়ার করেছেন।
অভিনেত্রী জোতিকা জ্যোতি মায়ের জন্য লিখেছিলেন আবেগী স্ট্যাটাস। তার একাংশ- ‘মা এক আজব জিনিষ ! কাছে না থাকলেও আমি অসুস্থ হলে সে ছটফট করতে থাকে, আমার মন খারাপ থাকলে অস্থির হয় , আমার কোন বিপদ আগেই টের পায়, কি অদ্ভুত! কিচ্ছু লুকানো যায়না.........!!!!!!’
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সোনিয়া রহমান ছবি দিয়েছেন ‘হ্যাপী মাদারস ডে’ ক্যাপশনে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী রেহনুমা খানম তিথি মা দিবসে করেছেন মা হারানোর আক্ষেপ। স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন-‘আমি কখনই তোমার জন্য, তোমার আদরের জন্য কাঁদি না। আমি কেবল কষ্ট পাই কেন আমি তোমাকে দেখতে পারি না!!!’
এভাবেই অনলাইনে মা দিবস ছিল মিশ্র অনুভূতি আর আবগের; মায়ের জন্য, মায়ের ভালবাসার জন্য।
রাইজিংবিডি/এলএ