সাতসতেরো

অনেক হয়েছে আর নয়: ইয়াহিয়াকে ভাসানীর হুঙ্কার

অগ্নিঝরা মার্চের আজ নবম দিন। ১৯৭১-এর উত্তাল-অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর অন্যতম একটি। এইদিন ছিল মঙ্গলবার। মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল সারাদেশ। ঢাকা শহরও ছিল মিছিলের নগরী। যেখানে সেখানে জটলা, মিছিল, মিটিং চলতেই থাকে। চরমে পৌঁছে দেশব্যাপী চলা লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন। 

এইদিন পল্টন ময়দানে জনসভায় বর্ষীয়ান মজলুম নেতা মওলানা ভাসানী দ্ব্যর্থকণ্ঠে বলেন, ‘শেখ মুজিব নির্দেশিত মার্চের মধ্যে কিছু না হলে আমি শেখ মুজিবের সাথে মিলে ১৯৫২ সালের ন্যায় আন্দোলন শুরু করব।’

তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘অনেক হয়েছে আর নয়। তিক্ততা বাড়িয়ে আর লাভ নেই। লা-কুম দ্বী-নুকুম, ওয়ালিয়া দ্বীন (অর্থাৎ তোমার ধর্ম তোমার আমার ধর্ম আমার)।’

পল্টনের জনসভায় মওলানা ভাসানীর এই বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু মুজিবের সঙ্গে পরবর্তী কর্মপন্থা নিয়ে তাদের দীর্ঘ টেলিফোন আলাপ হয়।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পাক হানাদাররা।  ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিচ্ছেন, সেই অনুযায়ী চলছে বাংলাদেশ। পুরো বাংলাদেশ চলছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। শুধুমাত্র ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও কোন নিয়ন্ত্রণ নেই পাকিস্তানের সামরিক জান্তার।

এমনকি শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া পাক সামরিক জান্তা ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশ পালন করতে মুখের ওপর ‘না’ বলতে থাকেন বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের বৈঠকে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়। সভায় কয়েকদিনের আন্দোলনে নিহতদের, বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক ইকবালসহ অন্যদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এদিন সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে সারাদেশ ছিল অচল। সরকারি-আধাসরকারি স্বায়ত্তশাসিত অফিস, আদালতের কর্মীরা হরতাল পালন করেন। যেসব অফিস জরুরী প্রয়োজনে খোলা রাখার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল সেসব অফিস নির্দেশনানুযায়ী খোলা ছিল।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মোতাবেক সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাসাবাড়িতে কালো পতাকা উড্ডীন ছিল।  আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের নির্দেশে ব্যাংক-বীমা দপ্তরসমূহ সকাল সাড়ে ৯টা হতে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খোলা ছিল এবং এ সময়ে কড়া নজরদারি ছিল যাতে কোন টাকা-পয়সা পশ্চিম পাকিস্তানে চালান হতে না পারে।