সাতসতেরো

রমজানে নারীর বিশেষ আমল

মাহে রমজান নারী-পুরুষ সবার জন্যই দয়া, ক্ষমা ও মুক্তির বারতা নিয়ে হাজির হয়। এরপরও রমজান মাসে নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য ও আমলের বিষয়টি একটু ভিন্ন। পুরুষ বাইরের নানা দিক সামাল দিতে গিয়ে রমজানের পরিপূর্ণ দাবি পূরণে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়। সাধারণত নারীদের বাইরের ব্যস্ততা কম থাকে। ঘরোয়া পরিবেশেই কাটে রোজার দিনগুলো। ফলে তাদের পক্ষে রমজানের পূর্ণ ফজিলত ও বরকত লাভ করা অনেকাংশে সহজ। তাই তাদের রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে সফলতার দ্বার উন্মোচন করা উচিত।

রমজানে প্রতিটি ইবাদতেই ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রোজাই হচ্ছে রমজানের প্রধান ইবাদত। তবে রোজার চেয়ে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। রোজা রাখার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে থাকার বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য হলেও অনেকেই রোজা রেখে ঠিকমতো নামাজ পড়েন না। এটা খুবই অন্যায়। অন্য সময় তো নামাজ পড়বেনই, রমজানে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন। তাছাড়া অন্যান্য ইবাদতের মাত্রাও বাড়িয়ে দেওয়া উচিত। এই মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবেন। রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেক গুণ বেশি। আর যারা কোরআন পড়তে পারেন না, তারা এ মাসে শিখে নিতে পারেন। চলাফেরা ও চালচলনে শালীনতা আনবেন। নারীর খোলামেলা চালচলন তাদের নিজেদের রোজার জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরপুরুষের রোজা নষ্ট করার জন্যও দায়ী। পরচর্চা, কুৎসা, নিরর্থক বিষয় নিয়ে মাতামাতি পরিত্যাগ করতে হবে। এগুলো রোজার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। না খেয়ে উপোস থাকা যেমন রোজার অংশ, তেমনি বাকসংযমও। তাই রমজানে নারীর উচিত হলো যথাসম্ভব বাকসংযম করা।

অধিকহারে দান-সদকা করবেন। অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রমজানে দান-সদকার ফজিলত অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে নারীর রয়েছে দারুণ সুযোগ। সংসারের নিয়ন্তা হিসেবে তারা এ মাসে গরিব-দুঃখীর দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। সবার সঙ্গে মার্জিত আচরণ করবেন। রোজা রেখে ক্ষুধা-পিপাসার প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে প্রকাশ না পায়। সাংসারিক কাজের ঝামেলার কারণে রোজা রেখে মেজাজ খারাপ করে রাখা উচিত নয়। সংসারের শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি খেয়াল রাখাও প্রয়োজন।

বছরের অন্যান্য সময় থেকে যেহেতু রমজানের রুটিন কিছুটা ভিন্ন সেজন্য সাংসারিক কাজকর্ম কিংবা পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তা নিরসন করার দায়িত্ব নারীর ওপর। অন্যের সুবিধার কথা চিন্তা করে, নিজে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করে হলেও সংসারের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা উচিত। রমজানে যত খুশি খরচ করুন, কোনো বাধা নেই- এ ধরনের একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত। কিন্তু কথাটি ঠিক নয়। রমজান সংযমের মাস হিসেবে সব কিছুতেই সংযম আনতে হবে। কোনো অবস্থাতেই অপ্রয়োজনীয়, অধিক কিছু করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

রমজানের শেষ দশক ইতিকাফের সময়। ইতিকাফ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। নারী ইচ্ছে করলে ইতিফাক করতে পারেন। তবে তা অন্দর মহলে পূর্ণ পর্দা বজায় রেখে। এর দ্বারা রমজানের দাবি যেমন ভালোভাবে আদায় করা যায়, তেমনি মহিমান্বিত রাত শবেকদরের ফজিলত ও বরকত লাভে ধন্য হওয়া যায়। তাই নারীর জন্য এ সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম