সাতসতেরো

প্রভুত কল্যাণ ও বৈশিষ্ট্যের মাস রমজান

সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের অনেক মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে কোরআনুল কারিম নাজিল হয়েছে। কোরআন শুধু একটি গ্রন্থ নয়। এটি মহান আল্লাহর বাণী সর্বশেষ আসমানি কিতাব মানবজাতির পরিপূর্ণ জীবন বিধান।

কোরআনের আলোকে আমাদের জীবন আলোকিত করতে হবে। শুধু রমজান মাস নয়, বছরের বাকি এগারো মাসও কোরআনের আলোকে জীবন যাপন করার শপথ নিতে হবে। কোরআনময় জীবন যাপন করলে সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তিময় জীবন দান করবেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী এক নির্ভুল মানদণ্ড। অতএব তোমাদের মধ্যে যারাই এ মাসের সাক্ষাৎ পাবে তারা যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

রমজান কোরআন নাজিলের মাস। কোরআনের উৎসবের মাস। এ মাসে কোরআনের পূর্ববর্তী নাজিলকৃত সকল অংশ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাইল আলাইহিস সালামকে পড়ে শোনাতেন। এখন আমাদের নিজেদের আমল এবং যাপিত জীবন কোরআনের আলোকে হতে হবে। এ মাসে আমাদের বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। কোরআনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কোরআনের শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়ন করতে হবে। রমজান মাসে নফল ইবাদতের বিনিময়ে ফরজের সমান এবং প্রতিটি ফরজের বিনিময়ে সত্তর গুণ সওয়াবের ওয়াদা করা হয়েছে। মাহে রমজানের এ পর্যন্ত কতটুকু নফল ইবাদত আমরা করতে পেরেছি বা করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি? 

ফরজগুলোকে যথার্থ আন্তরিকতা সহকারে আদায়ের উদ্যোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। রমজানে শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখা হয়। আমরাও নিজেদেরকে শয়তানি প্ররোচনা থেকে মুক্ত করতে হবে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের এ মাসে আমাদের প্রাত্যহিক প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে সংযম অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যয় এবং ভোগ-বিলাসের ইচ্ছা দমন করতে হবে।

রমজান সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও অংশীদারিত্বের মাস- বিষয়গুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের চারপাশের অভাবগ্রস্ত, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষদের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য সাধ্যমতো কিছু করার পরিকল্পনা করতে হবে। অভাবী, ক্ষুধার্ত এবং দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন যারা রয়েছেন তাদেরকে আমাদের সম্পদে অংশীদারিত্বের কথা ভাবতে হবে। দুনিয়াব্যাপী আমাদের যে অসংখ্য মুসলিম ভাই-বোন বিপদক্লিষ্ট জীবন যাপন করছেন, সেহরি এবং ইফতারের জন্য যাদের কোনো খাবার জুটছে না, শান্তিতে রাত জেগে নফল ইবাদত করার মতো নিরাপত্তা যাদের নেই, তাদের জন্য সহানুভূতি ও সহমর্মিতা জানানোর কার্যকর কোনো পন্থার কথা আমাদের ভাবতে হবে।

কোরআন নাজিলের এ মাসে আমরা অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কাজে সময় ব্যয় করা ছাড়তে হবে। এসব অর্থহীন কাজ-কারবার থেকে বিরত থাকার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রমজান মাস মিথ্যা-ফাসেকি ও ঝগড়া থেকে বিরত থাকার মাস। আমাদের মিথ্যা বলা ছাড়তে হবে। মোটকথা সব ধরনের পাপাচার অনাচার আমাদের ছাড়তে হবে। এই মাসে আমরা যখন সব ধরনের মন্দ আচরণ ছাড়তে পারব এবং ভালো দিকগুলো গ্রহণ করতে পারব, তখনই এই মাসের কল্যাণ আশা করতে পারি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম