সাতসতেরো

শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত

অফুরন্ত কল্যাণ ও রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয় মাহে রমজানে। রমজান প্রায় শেষ প্রান্তে। রমজানের পরের মাস শাওয়াল। যা চন্দ্র মাসের হিসাবে দশম মাস। এই শাওয়াল মাসে রয়েছে ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা। রমজানের ফরজ রোজা পালনের পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা মুস্তাহাব। এই রোজার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সা. নিজেও এ রোজা রাখতেন। সাহাবায়ে কেরামদেরকেও রাখার নির্দেশ দিতেন। সুতরাং রমজান বিদায় নিতে যাচ্ছে। রমজানের পরপরই আমাদেরে এই ছয়টি রোজা রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।

ছয় রোজার ফজিলত

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর তার সঙ্গে সঙ্গে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন পূর্ণ বছরই রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম) অপর বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি রমজানের রোজা শেষ করে ছয় দিন রোজা রাখবে, সেটা তার জন্য পুরো বছর রোজা রাখার সমতুল্য। (মুসনাদে আহমাদ) 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, যারা পবিত্র রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের আরো ছয়টি রোজা রাখবে তারা সেই ব্যক্তির মতো হয়ে যাবে যে ব্যক্তি সদ্য তার মায়ের পেট থেকে দুনিয়াতে আগমন করেছে। অর্থাৎ সে শিশু যেভাবে পুত-পবিত্র তথা নিষ্পাপ, তার কোনো গুনাহ নেই, যারা শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে তারাও সেই নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে যাবে। (তিরমিজ) 

হযরত উবাইদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার উপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে, কাজেই তুমি সারাবছর রোজা না রেখে রমজানে রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখো। তাহলেই তুমি সারাবছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে। (তিরমিজি)

এক বছরের সমান হয় যেভাবে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বছরের সমান হওয়ার বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য, আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এই হলো এক বছরের রোজা। (সুনানে নাসায়ি) মুহাদ্দিসরা বিষয়টি আরো ব্যাখ্যা করে বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার ১০ গুণ সাওয়াব পাবে এবং কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তারই প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬) 

এই হিসাবে রমজানের ৩০ রোজায় ৩০০ রোজার সওয়াব হয়। আর শাওয়ালের ছয় রোজায় ৬০ রোজার সওয়াব হয়। এভাবে রমজানের ৩০ রোজা ও শাওয়ালের ছয় রোজা মোট ৩৬০ রোজার সমপরিমাণ হয়। আর কোনো রমজান মাস যদি ২৯ দিন হয়, তাহলেও আল্লাহ তায়ালা রোজাদারকে ৩০ দিনেরই সওয়াব দান করেন।

ছয় রোজা রাখার নিয়ম

ঈদুল ফিতরের দিন ছাড়া মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে ছয়দিনে ছয় রোজা রাখা যায় কিংবা পৃথকভাবেও আদায় করা যায়। তবে শাওয়ালের প্রথম দিকে একসঙ্গে ছয়টি রোজা রাখাই উত্তম। যাদের রমজানের রোজার কাজা আছে, তারা আগে কাজা আদায় করবে। অতঃপর শাওয়ালের রোজা পালন করবে। উল্লেখ্য যে, শাওয়ালের ছয় রোজার সওয়াব তারা পাবে, যারা রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালন করেছে। কারণ রমজানের রোজা হচ্ছে ফরজ আর শাওয়ালের রোজা হলো মুস্তাহাব। মুস্তাহাবের সওয়াব তখনই পাওয়া যায় যখন ফরজ পালন করা হবে। তাছাড়া নফলসমূহ ফরজের ত্রুটিগুলোর ক্ষতিপূরণ করে। অনুরূপভাবে শাওয়ালের ছয় রোজা রমজানের ফরজ রোজার অসম্পূর্ণতাকে সম্পূর্ণ করে এবং তাতে কোনো ত্রুটি থাকলে তাও দূর করে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, কেউ নফল রোজা রেখে ভেঙে ফেললে তার কাজা আদায় করা ওয়াজিব। আর শাওয়ালের ছয় রোজা পুরুষ, মহিলা, যুবক, বৃদ্ধসহ সবাই রাখতে পারে। সবার উচিত এই মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ রোজাগুলো রাখা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

নির্বাহী সম্পাদক : মাসিক ইসলামী বার্তা ও অর্থ সম্পাদক : বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম