সাতসতেরো

লাঠি নিয়ে খেলা

মান্নান পলাশচাটমোহর (পাবনা), ৪ মার্চ : লাঠিখেলা বাংলার আবহমান ঐতিহ্য। পাড়ায়-মহল্লায় লাঠিখেলার দল দেখতে পাওয়া যায় না আর। মাথায় লাল কাপড় জড়িয়ে লাঠিয়াল দলনেতা হাঁক ছাড়তেই বেজে উঠতো ঢোল-কাঁসার বাদ্য। তারপর দুই দলে চলতো লাঠি-শরকি-ঢালের সমন্বয়ে দৃস্টিনন্দন লাঠিখেলা। এসব এখন শুধুই গল্পগাঁথা।জীবনের প্রয়োজনে প্রথম বাঁশের লাঠি হাতে তুলে নিয়েছিলো মানুষ। কখনো প্রতিপক্ষকে আঘাত করতে, কখনো হিংস্র জীব-জন্তুকে প্রতিরোধ করতে লাঠি চালনার নানা কলাকৌশল আবিস্কার করে মানুষই। কালক্রমে সেই বাঁশের লাঠি নিয়েই ‘লাঠিয়াল’ নামে পেশাজীবীদের উন্মেষ ঘটে। বৃটিশ আমলে ভূস্বামী ও জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতা পায় একশ্রেণীর লাঠিয়াল বাহিনী। পরে সেই লাঠিয়াল বাহিনীর বিলোপ ঘটলেও লাঠিয়ালদের লাঠির কসরৎ ও নৈপুণ্য এখন বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘লাঠিখেলা’ হিসাবে পরিগণিত।গ্রামাঞ্চলে একসময় লাঠিখেলার খুবই প্রচলন ছিল। চিরায়ত বাংলার লোক উৎসবে এখনও লাঠিখেলার আয়োজন চোখে পড়ে। বাংলা নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, পৌষ পার্বণ, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান, জাতীয় দিবস উদ্যাপনেও লাঠিখেলা দেখতে পাওয়া যায়। আবার কারবালা ট্র্যাজেডির শোকের মাতমকালেও চলে এ লাঠিখেলা। চাটমোহরের এসব অঞ্চলে লাঠিখেলোয়ারদের হাতাকাটা গেঞ্জি ও রঙ্গীন হাফপ্যান্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়। মাজায় গামছা, পায়ে গুচ্ছ নুপুর বেঁধে সুর-ছন্দে লাঠিখেলায় মত্ত হয় এরা। লাঠি ঘুরানোর সঙ্গে সঙ্গে  বেজে ওঠে ঢোল-ঢাক-কাঁসা। ঢোলের আওয়াজে দর্শক আলোড়িত হয়। এক দলে খেলোয়াড় থাকেন ২২-৩০ জন। একদল আরেকদলকে আক্রমণ প্রতি আক্রমণে জমিয়ে তোলেন। বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে চলতে থাকে নতুন নতুন আক্রমণ কৌশল। লাঠিখেলা শুরুর আগে থাকে বিশেষ বন্দনা। লাঠিয়ালরা সারিবদ্ধভাবে মাঠে প্রবেশ করেন। প্রথমেই হাত মিলিয়ে নেন বাদ্যযন্ত্রিদের সাথে। লাঠি হাতে নিয়ে চুমু খান। এরপর দেখাতে থাকেন একক, যৌথ ও দলীয়ভাবে নানা রকম কসরৎ। থাকে গুরু খেদানো ছোট লাঠি, রামদা, শরকি ও বর্শা। চারজন খেলোয়াড় লম্বা লম্বা লাঠি নিয়ে খেলেন শরকি খেলা। সবচেয়ে আকর্ষণীয় খেলা দোতলা। দু’জন খেলায়াড়ের কাঁধে নেওয়া লাঠির ওপরে দুইপ্রান্তে দাঁড়িয়ে লাঠি ও রামদা দিয়ে কসরৎ দেখান।

 

রাইজিংবিডি / টিপু