সাতসতেরো

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’

‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ -এটি ছিলো স্বামী বিবেকানন্দের সর্বাধিক উদ্ধৃত উক্তি।

এই মহৎপ্রাণ মানুষটির প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯০২ সালের ৪ জুলাই ভারতের বেলুড় মঠে তিনি দেহত্যাগ করেন। তার শিষ্যদের মতে এটা ছিল মহাসমাধি। মাত্র ৩৯ বছরের জীবনে তিনি বিশ্ব জয় করে গেছেন।

‘নিজের উপর বিশ্বাস-ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস। ইহাই উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়। তোমার যদি এ দেশীয় পুরাণের তেত্রিশ কোটি দেবতার ওপর এবং বৈদেশিকেরা মধ্যে মধ্যে যে সকল দেবতার আমদানি করিয়াছে, তাহাদের সবগুলির উপরই বিশ্বাস থাকে, অথচ যদি তোমার আত্মবিশ্বাস না থাকে, তবে তোমার কখনই মুক্তি হইবে না।’ এ কথাও বিবেকানন্দের।

বিবেকানন্দ আরো বলেছেন- ‘হে বীরহৃদয় যুবকগণ ,তোমরা বিশ্বাস কর যে, তোমরা বড় বড় কাজ করবার জন্য জন্মেছ। ওঠ, জাগো, আর ঘুমিও না; সকল অভাব, সকল দুঃখ ঘুচাবার শক্তি তোমাদের ভিতরেই আছে। এ কথা বিশ্বাস করো, তা হলেই ঐ শক্তি জেগে উঠবে।’

বিবেকানন্দ বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাস কয়েকজন আত্মবিশ্বাসী মানুষেরই ইতিহাস। সেই বিশ্বাসই ভিতরের দেবত্ব জাগ্রত করে। তুমি সব কিছু করিতে পার।’

চলছে করোনাকাল। পৃথিবীতে বড় দুঃসময় যাচ্ছে। মানুষ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমনকি মানুষের আত্মবিশ্বাসও কমে যাচ্ছে। এ সময় স্বামী বিবেকানন্দ'র বাণী নিঃসন্দেহে মানুষের জন্য পরম সুধাতুল্য।

বিবেকানন্দের জন্ম ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি কলকাতার এক বাঙালি পরিবারে। বাবার রাখা নাম ছিলো নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ১৮৮১ সালে তিনি যুগাবতার খ্যাত রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে আসেন এবং ১৮৮৭ সালে সন্ন্যাস গ্রহণের পর স্বামী বিবেকানন্দ নাম ধারণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই আধ্যাত্মিক বিষয়সমূহে তাঁর বিশেষ আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে তিনি শেখেন, সকল জীবই ঈশ্বরের অংশ। তাই মানুষের সেবার মাধ্যমেই ঈশ্বরের সেবা করা যায়। তিনি আমৃত্যু মানুষকে সে সেবার পথই দেখিয়েছেন।

গুরুদেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ ভারতীয় উপমহাদেশ ভ্রমণ করেন এবং ব্রিটিশ ভারতের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেন। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং ১৮৯৩ সালে বিশ্বধর্ম মহাসভায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে  রয়েছে- শিকাগো বক্তৃতা, কর্মযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বেদান্ত, ভারতে বিবেকানন্দ, ভাববার কথা, পরিব্রাজক, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, বীরবাণী (কবিতা-সংকলন), মদীয় আচার্যদেব ইত্যাদি। বিবেকানন্দ সংগীতজ্ঞ ও গায়কও ছিলেন। তার রচিত দুইটি বিখ্যাত গান হল ‘খন্ডন-ভব-বন্ধন’ (শ্রীরামকৃষ্ণ আরাত্রিক ভজন) ও ‘নাহি সূর্য নাহি জ্যোতি’।