সাতসতেরো

দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার ১২৫তম জন্মদিন 

এশিয়াখ্যাত কুমুদিনী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার (আর পি সাহা) ১২৫ তম জন্মদিন আজ। ১৮৯৬ সালের এই দিনে তিনি সাভারের কাছৈড় গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। 

তার পৈত্রিক বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ সাহা ও মা কুমুদিনী সাহার  চার সন্তানের  মধ্যে রণদা দ্বিতীয়। বাবা ছিলেন দলিল লেখক, মা গৃহিণী।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে গ্রামবাংলার আর দশজন শিশুর মতোই রণদার হাতেখড়ি হলেও লেখাপড়া বেশীদূর এগোয়নি। তার যখন ৭ বছর বয়স, সেসময় সন্তান প্রসবকালে ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে মা কুমুদিনী দেবী মারা যান। তাই প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা লাভ করা তার হয়নি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। গ্রামের নদী, নিসর্গ ও মানুষ, কলকাতা শহরের নাগরিক বাস্তবতা, তৎকালীন পরিস্থিতি- এসব থেকেই শিক্ষা পেয়েছিলেন তিনি। নিজস্ব আদর্শ ও চিন্তাধারাও তৈরি হয়েছিল সেই শিক্ষার গুণে।

প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দেবেন্দ্রনাথ সাহা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু সৎ মায়ের অনাদর ও নিষ্ঠুরতা রণদাকে একরোখা ও বেপরোয়া করে তোলে। অবস্থা দেখে বাবা তাকে পাঠিয়ে দেন মামাবাড়ি সাভারের শিমুলিয়া। মা হারা রণদার মন বাবা ও সৎ মায়ের অনাদরে এতটাই বিষিয়ে উঠেছিল যে মামা বাড়িতেও আর তার মন বসল না। সেখান থেকে তিনি পালিয়ে চলে গেলেন কলকাতা। অপরিচিত কলকাতায় তার কোনো আশ্রয় নেই। জীবন ধারনের জন্য তখন কুলি, রিকশা চালানো, ফেরি, খবরের কাগজ বিক্রির মতো বিচিত্র কাজ করেছেন রণদা। কলকাতায় তখন কাজের সন্ধানে ছুটে আসা ভুখা মানুষের ভিড়, গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দেওয়া ম্যালেরিয়া- এসবই তাকে স্বদেশি আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায়। মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য বিপ্লবের দীক্ষা নেন তিনি। এজন্য তাকে কারাভোগও করতে হয়।

১৯১৪ সালে বিশ্বে মহাযুদ্ধের দামামা বেজে উঠল। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেতা সুরেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বিপ্লবীদের আহ্বান জানালেন ইংরেজদের হয়ে বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করার জন্য। স্বেচ্ছাসেবী বেঙ্গল অ্যাম্বুলেন্স কোরের হয়ে যুদ্ধে নামলেন রণদা প্রসাদ সাহা। ব্রিটিশ সেনাদের তখন দারুণ খাদ্যাভাব, নানা রোগে আক্রান্ত তারা। রণদা আহত সৈনিকদের সেবায় একেবারে ডুবে গেলেন। তিনি শক্রর চোখ এড়িয়ে সবার জন্য খাদ্য সংগ্রহ করতেন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যখন বাগদাদে বন্দি তখন সেখানে ছিল অ্যাম্বুলেন্স কোর। একদিন হঠাৎ সামরিক হাসপাতালে আগুন লেগে যায়। আগুনের ভয়ে সবাই জীবন নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তখন রণদা প্রসাদ দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে একজন রোগীকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তাকে দেখে আরও তিনজন উদ্ধার কাজে যোগ দেন। শেষ রোগীটিকে বের করে এনে অজ্ঞান হয়ে গেলেন রণদা। সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও রণদাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। বেঙ্গল রেজিমেন্টে ভর্তি হয়ে রণদা যখন ইরাক যান তখন তার সঙ্গে দেখা হয় লম্বা চুল, বড় বড় চোখ আর প্রাণবন্ত এক যুবকের। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। রণদা তখন অস্থায়ী সুবেদার মেজর। রণদা প্রসাদ সাহা কাজী নজরুল ইসলামকে সংগীত বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামও নিজের পছন্দের কাজটি পেয়ে খুশি হয়েছিলেন।   ব্রিটিশ সরকার প্রথম মহাযুদ্ধ থেকে ফিরে আসা ভারতীয়দের সবাইকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দিয়েছিল। লেখাপড়া সামান্য হলেও যুদ্ধে তার অবদানের কথা বিবেচনা করে রেলওয়ের কালেক্টরের চাকরি দেওয়া হয়েছিল রণদা প্রসাদকে। কর্মস্থল ছিল সিরাজগঞ্জ থেকে শিলাইদহ। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে ১৯৩২ সালে এই চাকরিতে ইস্তফা দেন তিনি। ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে টাকা পান তা দিয়ে শুরু করেন কয়লার ব্যবসা। প্রথমে বাড়ি বাড়ি কয়লা সরবরাহ, পরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কয়লা সরবরাহের কাজ করেন রণদা প্রসাদ।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার সতীশ চৌধুরীর পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতায় মাত্র ছয় বছরে কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত কয়লা-ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন তিনি। কয়লার ব্যবসার সূত্রে রণদা নৌপরিবহনের ব্যবসা শুরু করলেন। অন্য ব্যবসায়ীরা যখন ব্যবসায় ব্যর্থ হয়ে কোনো কিছু জলের দামে বেচে দিত, রণদা তা কিনে নিয়ে নতুন করে দাঁড় করাতেন। কোনো ব্যবসার সমস্যাগুলো দ্রুত খুঁজে বের করে সেটিকে আবার পুনর্জীবিত করে তুলতেন তিনি। এ সময়ে দ্য বেঙ্গল রিভার সার্ভিস কোম্পানি নামে নৌ-পরিবহন সংস্থা এবং নৌ-পরিবহন বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানির মাধ্যমেই তিনি নিজেকে একজন সফল নৌপরিবহন ব্যবসায়ী করে তোলেন। নৌপথে মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত বেঙ্গল রিভার সার্ভিস প্রথমে যৌথ মালিকানায় থাকলেও পরে সব অংশীদারের অংশ কিনে নেন রণদা।

১৯৪২-১৯৪৩ সালে সরকারের খাদ্যশস্য ক্রয়ের এজেন্ট নিযুক্ত হন রণদা। ১৯৪৪ সালে নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং জর্জ এন্ডারসনের কাছ থেকে ‘জুট প্রসেসিং বিজনেস’ এবং ‘গোডাউন ফর জুট স্টোরিং’ কিনে নেন। এরপর নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ইংরেজদের মালিকানাধীন তিনটি পাওয়ার হাউস কিনে নেন। চামড়ার ব্যবসাও শুরু করেন এই সময়। এভাবেই নিজ মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হন তিনি। অর্থ বিত্তে বড় হলেও অর্থভাবে মায়ের মৃত্যুর কথা ভুলে যানি রণদা প্রসাদ সাহা। মায়ের সেই স্মৃতি তাকে তাড়িয়ে ফিরেছে সব সময়। তাই পরিণত জীবনে দুস্থ মানুষের সেবা দিতে গড়ে তুলেন মায়ের নামে দাতব্য প্রতিষ্ঠান কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রণদা প্রসাদ বাংলাদেশে চলে আসেন। এ কারণে দুই দেশের ব্যবসা দুভাগ হয়ে যায়। ভারতে থাকা কুমুদিনী ওয়েলফেরার ট্রাস্টের টাকায় পরিচালিত হতে থাকে কলকাতা, কালিঙপং ও মধুপুরের কিছু দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এদেশে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। এই বছরই রণদা প্রসাদের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল’এর আওতাভুক্ত হয়। নিজের স্বার্থ নয়, মানুষের কল্যাণ বড় করে দেখার মানসিকতা থেকেই তাঁর ব্যবসা পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনী ধরে নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এই ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

কোনো ফলের আশা নয়, কর্মকেই জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন। নিম্নবিত্তের সন্তান হয়েও জীবনে কঠোর পরিশ্রম করে যে বিশাল সম্পদ তিনি অর্জন করেছিলেন তার সবটুকুই অকাতরে বিলিয়ে গেছেন। সম্পদ তিনি নিজের জন্য অর্জন করেননি, করেছেন মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার জন্য। জীবনে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠানে এবং প্রতিষ্ঠান থেকে এক নির্মোহ মহৎ মানুষে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। সংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতেন রণদা প্রসাদ সাহা। এ কারণেই শহর থেকে দূরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরকে কর্মস্থল হিসেবে বেছে নেন। অতঃপর মির্জাপুর গ্রামের প্রভাবশালী তালুকদার সতীশ চন্দ্র পোদ্দারের কন্যা কিরণবালা দেবীকে বিয়ে করেন। কিরণবালা দেবী ছিলেন রণদা প্রসাদের সুযোগ্য সহধর্মিণী। মানুষের কল্যাণে নিবেদিতা ছিলেন তিনিও। ১৯৩৮ সালে কুমুদিনী হাসপাতালের শোভা সুন্দরী ডিসপেন্সারির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় কিরণবালা ২০০ ছাত্রীর জন্য একটি আবাসিক বালিকা বিদ্যালয় ভারতেশ্বরী হোমসের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

একটি সমাজের উন্নতির জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও এগিয়ে নেবার এজন্য ১৯৪৪ সালে মির্জাপুরের মতো অজগ্রামে পাশ্চাত্য ভাবধারায় গড়ে তুলেছিলেন ভারতেশ্বরী হোমস। এটি ছিলো বিরাট চ্যালেঞ্জ। যোগেন্দ্র চন্দ্র পোদ্দারের (সম্পর্কে রণদার কাকা) বাড়ির আঙিনায় শুরু হয়েছিল এ স্কুল। তারপর ধীরে ধীরে এ স্কুল আদর্শ এক বিদ্যাপীঠে পরিণত হয়েছে। প্রথা ও কুসংস্কারের জালে বন্দি নারীদের শিক্ষিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবং সমাজপতিদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে টাঙ্গাইলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কুমুদিনী মহিলা কলেজ’। এটিই দেশের প্রথম আবাসিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ। নারী সমাজের উন্নয়নেই যে তিনি কেবল মনোযোগী ছিলেন তা নয়, নারীশিক্ষার পাশাপাশি পুরুষদের জন্য তিনি মানিকগঞ্জে তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠ করেন ‘দেবেন্দ্র কলেজ’।

রণদা প্রসাদ অনুভব করেছিলেন শিক্ষার অভাবের মতো চিকিৎসার অভাব গ্রামের মানুষের জীবনে প্রবল। চিকিৎসার অভাবে অনেককেই মরতে দেখেছেন তিনি। মায়ের মতো অনেক নারীর অকাল মৃত্যু তাঁর মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল। তাই গ্রামের মানুষের সুচিকিৎসার জন্য তিনি মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘কুমুদিনী হাসপাতাল’। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল দেশের হাতে গোনা উন্নত চিকিৎসার সুযোগসমৃদ্ধ হাসপাতালগুলোর একটি। মাত্র ২০ শয্যা নিয়ে ১৯৪৪ সালে যাত্রা শুরু হয় এই হাসপাতালের। পরবর্তীতে ৭৫০ শয্যার হাসপাতালটি উন্নীত হয়। দেশের দূর-দুরান্তের গরিব রোগীরা চিকিৎসা পাওয়ার আশায় আসতে থাকেন এ হাসপাতালে। একসময় এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো। বর্তমানে বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসার জন্য সামান্য অর্থ নেওয়া হয়। ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের প্রথম ভবনটিও ১৯৫৪ সালে তারই দানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

রণদা প্রসাদ সাহা ছিলেন সংস্কৃতিপ্রাণ মানুষ। অন্যের মধ্যে শিল্প ও সংস্কৃতির গুণ দেখলে তিনি যেমন তা উস্কে দিতেন, তেমনি নিজেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। শুরু থেকেই ভারতেশ্বরী হোমসে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন তিনি। ১৯৪৮ সালে মির্জাপুরে বিপুল উৎসাহ নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সৌখিন নাট্যসংঘ ও মঞ্চ। এমন আধুনিক মঞ্চ তখন পূর্ববাংলার রাজধানী ঢাকায়ও ছিল না। তিনি নিজেও অভিনয় করতেন।

১৯৭১সালে ৭ মে পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নারায়ণগঞ্জ থেকে রণদা প্রসাদ ও তার পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহা রবিকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তাদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ধারণা করা হয় সেই দিনই তাদের হত্যা করা হয়। পাক হানাদার বাহিনীর দোসররা স্বামী ও সন্তানকে ধরে নেওয়ার পর থেকেই শোকে শয্যাশায়ী হন রণদা প্রসাদের স্ত্রী কিরণবালা দেবী। শেষ জীবনে তিনি নির্বাক হয়ে যান। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকার পর ১৯৮৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পরলোকগমন করেন তিনি।

রণদা প্রসাদ সাহার নাতনী রাজিব প্রসাদ সাহা তার দাদুর আদর্শকে সমুন্নত রাখতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। তার যোগ্য নেতৃত্বে কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার বেশ কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে কুমুদিনী মহিলা মেডিক্যাল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং কলেজ,  নারায়ণগঞ্জে রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

দিনটি উপলক্ষে রণদা প্রসাদ সাহার গ্রামের বাড়িতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এদিন ভোরে ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী মহিলা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী ও নার্সিং স্কুলের শিক্ষার্থীরা রণদার বাড়িতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।