সাতসতেরো

ড্যান্সারের ওড়ার জন্য পাখার প্রয়োজন নেই

প্রথম দর্শনে ছবিগুলো দেখে আপনিও হয়তো গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠতে পারেন- মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ্‌দিগন্তের পানে নিঃসীম শূন্যে…। ইরার নৃত্যভঙ্গীর সঙ্গে সংগীতের অপূর্ব মিলন আপনাকে মুগ্ধ করবেই! অন্যদিকে যারা ব্যালেনৃত্য সম্পর্কে জানেন, তারাও অবাক হবেন রাজধানীর খোলা রাস্তায় একজন অচেনা তরুণীকে হাওয়ায় উড়তে দেখে।

মুবাশশীরা কামাল ইরা আক্ষরিক অর্থেই এখন প্রশংসার হাওয়ায় ভাসছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে রাজু ভাস্কর্য এবং শাবিপ্রবি’র চলমান ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে পোস্টার থাকায় অনেকে বিষয়টি আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ আরেক ধাপ এগিয়ে ছবিগুলোর ক্যাপশনে জুড়ে দিচ্ছেন কবি নজরুলের বিদ্রোহী পঙ্‌ক্তিমালা। 

কে এই ইরা? আলোকচিত্রী জয়িতা আফরিন তৃষার মাধ্যমে খোঁজ মেলে ইরার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন তার ছবি নিয়ে হইচই তখন ইরা বসে আছেন নওগাঁয়। স্থানীয় কলেজে বাণিজ্য শাখায় দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। ছোটবেলা থেকেই নাচতে ভালোবাসেন ইরা। ২০১৭ সালে তার নাচে হাতেখড়ি। নওগাঁ শিল্পকলা একাডেমিতে সুলতান মাহমুদের কাছে নাচ শিখেছেন তিনি। পরে ঢাকায় ভরতনাট্যম শিখেছেন। ২০২১ সাল থেকে সাধনা সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে ব্যালেনৃত্যের ভাবনা মনে ঠাঁই নেয় লকডাউনের সময়। ঘরে বসেই শিখতে শুরু করেন ব্যালে। এ জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন বলে জানান। 

তবে ইরার আজকের এই পরিচিতির পেছনে তৃষার অবদান অনস্বীকার্য। তৃষার পরিকল্পনাতেই মূলত এই ফটোশুট করা হয়, যেগুলো পরে ভাইরাল হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৃষা বলেন, ‘আমাদের দেশে এ ধরনের কাজ খুব একটা দেখা যায় না। আমি বাইরে এ ধরনের অনেক কাজ দেখেছি। সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এরপর প্রায় এক বছর ব্যালের জন্য একজন মডেল খুঁজেছি। অবশেষে ইরাকে পাই। তার সঙ্গে ভাবনা শেয়ার করে প্রস্তুতি নেই।’

রাজু ভাস্কর্যে শাবিপ্রবি’র চলমান আন্দোলনসহ বিভিন্ন ব্যানার দেখে সেখানে ফটোশুট করার কথা ভাবেন তৃষা। সে কারণে অনেকে ছবিগুলো ছাত্র আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইরার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তেমন নয়। রাজু ভাস্কর্যের সামনের প্রতিবাদী পোস্টার, ব্যানার দেখে সেখানেই আমরা ব্যালের মাধ্যমে আমাদের কনসেপ্ট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ঢাকার বিখ্যাত বিভিন্ন জায়গায় ফটোশুট করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’

ব্যালেনৃত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ জুতো। জুতো সংগ্রহ করতে বেশ বেগ পোহাতে হয় ইরাকে। অবশেষে জুতো ছাড়াই ব্যালে করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর গত রোববার (২৩ জানুয়ারি) ফটোশুট করেন তৃষা। তিনিই এর দুদিন পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিগুলো পোস্ট করেন।

উল্লেখ্য, ব্যালে হচ্ছে এক ধরনের নৃত্যকলা। এখানে নাচের সঙ্গে অভিনয় এবং সংগীতের অপূর্ব সমন্বয় ঘটে। পাশ্চাত্যে এই শিল্পের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, দোমিনিকো দ্য পিয়াসেনজাই প্রথম ব্যালো শব্দটি ব্যবহার করেন। সেখান থেকেই ব্যালে শব্দটির উৎপত্তি। প্রথম সত্যিকারঅর্থে ব্যালে অনুষ্ঠিত হয় ১৫৮১ সালে। যদিও কিছু ছবিতে দেখা গেছে ইরা দু’হাত মেলে আক্ষরিক অর্থে হাওয়ায় ভাসছেন। এটি পুরোপুরি ব্যালে নয়। ইরার মতে এটি ‘ব্যালে এবং জিমন্যাস্টিক মিলিয়ে একটা ফর্ম।’