সাতসতেরো

শুরু হলো রহমতের মাস রমজান

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে শুরু হলো ইবাদতের মাস রমজান। ‘রমজান’ শব্দটি এসেছে আরবি ‘রমজ’ থেকে। এর অর্থ দহন বা পোড়ানো। আগুন যেমন কোনো জিনিসকে পুড়িয়ে ফেলে, ঠিক তেমনি রোজাও রোজাদারের পাপরাশি পুড়িয়ে ফেলে।

এই পবিত্র মাসের ইবাদত অন্য সব মাসের তুলনায় অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ ও বৈশিষ্ট্যময়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের আগের মাস শাবানের শেষ তারিখে সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, হে মুসলমানগণ! তোমাদের ওপর একটি মাহাত্মপূর্ণ ও বরকতময় মাস ছায়াপাত করেছে। এ মাসের একটি রাত (শবে কদর) হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন এবং এ মাসের রাতগুলোতে আল্লাহর দরবারে দণ্ডায়মান হওয়াকে (তারাবির নামাজ পড়াকে) নফল ইবাদত সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশে ফরজ নয়Ñ এমন কোনো ইবাদত আদায় করবে, সে অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান সওয়াব পাবে। এ মাসে ফরজ আদায় করার সওয়াব অন্য মাসের সত্তর ফরজের সমান পাওয়া যাবে।’ (বায়হাকি)

বরকতের মাস রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদগুলোতে মুসলমানদের উপস্থিতি বেড়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অধিকতর সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজে এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আগের তুলনায় অনেক বেশি উপস্থিত হচ্ছেন। হাদিসে উল্লেখিত ৭০ গুণ সওয়াব, প্রতিটি নফলের পরিবর্তে ফরজের সওয়াব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মুমিনের চোখে-মুখে। আল্লাহর ঘর মসজিদের মূল খোরাক হলো মুসল্লি। বছরের অন্যান্য সময়ে আমরা এত বেশি লোক সমাগম মসজিদে দেখতে পাই না, যেমনটা এই মাহে রমজানে দেখা যায়।

সাহাবি আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রমজানের প্রথম রাত আসে তখন বিতাড়িত শয়তান ও দুষ্টু জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, একজন ঘোষক ঘোষণা দিতে থাকেন- হে সৎকর্মশীল! অগ্রসর হও। হে অসৎকর্মশীল! থামো। মহান আল্লাহ রমজানের প্রতি রাতে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৬৪২)

মানুষ পাপ করে তিন শক্তি দ্বারা তাড়িত হয়। মানুষের নিজের ভেতরের কুপ্রবৃত্তি, তার স্বভাব তাকে দিয়ে পাপ করায়। আবার বাইরে থেকে মানুষকে পাপের প্ররোচনা দিয়ে থাকে শয়তান, দুষ্ট প্রকৃতির জিন এবং খারাপ মানুষেরা। রমজানের রাত শুরু হওয়া মাত্রই মহান আল্লাহ শয়তান ও দুষ্ট জিনদের বন্দী করে ফেলেন। তাই শয়তান ও দুষ্ট জিনরা রমজানে মানুষকে পাপ কাজের কোনো প্ররোচনা দিতে পারে না বা পারবেও না। পাপের এক তৃতীয়াংশ শক্তি বন্দী থাকার কারণে রমজানে পাপের পরিমাণ অনেক কমে আসে।

এ মাসে মানুষের মন অত্যন্ত নরম থাকে। আল্লাহর রহমতের ছায়ায় সারা দুনিয়ায় অন্যরকম শান্তির পরশ বুলিয়ে যায়। তাই এ সময় মানুষের মধ্যে আল্লাহমুখী হওয়ার, পরকালমুখী হওয়ার ও গুনাহ মাফ করিয়ে জান্নাতবাসী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত প্রবল থাকে। আমরা এই ভালো মানুষদের কাতারে শামিল হবো ইনশাআল্লাহ।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম