সাতসতেরো

রোজাদারের পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন

ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদের একটি হলো রোজা। রোজা মুমিন মুসলমানের ওপর ফরজ ইবাদত। দ্বিতীয় হিজরী শাবান মাসে রোজা ফরজ করা হয়। রমজান মাসে রোজা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ। যুগে যুগে নবী-রাসুলদের ওপরও রোজা পালন করা ছিল আবশ্যক। সে ধারাবাহিকতায় আমাদের উপরও রোজা ফরজ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকেদের প্রতি ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’(সুরা বাকারা : আয়াত১৮৩)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে: রমজান মাস, যার মধ্যে বিশ্বমানবের জন্য পথপ্রদর্শক এবং সুপথের উজ্জ্বল নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার মধ্যে প্রভেদকারী কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। (সুরা বাকারা :১৮৫)

হাদিসে এসেছে, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কালিমা পড়া, নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, হজ আদায় করা ও রমজানের রোজা রাখা।’ (সহিহ বুখারি)

রোজা এমন এক ফরজ ইবাদত যাতে কোনো লৌকিকতা নেই। রোজা একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্যই রাখা হয়। হাদিসে এসেছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুণাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহবুখারিও মুসলিম)

এছাড়াও রোজাদারদের জন্য অনেক পুরস্কার। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো।

রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ দেবেন

রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দেবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘বনি আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্যই। শুধু রোজা ব্যতীত; তা আমার জন্য। আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব।’ (সহিহ বুখারি)

রোজাদারের জন্য জান্নাতে স্পেশাল গেট

রোজাদারের জন্য জান্নাতে স্পেশাল গেট থাকবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতের একটি প্রবেশদ্বার রয়েছে, যার নাম রাইয়ান। কেয়ামতের দিন ওই দরজা দিয়ে সিয়াম পালনকারীরা প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউই ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। সিয়াম পালনকারীরা প্রবিষ্ট হয়ে গেলে দরজা বন্ধ করা হবে। ফলে সেই দরজা দিয়ে আর কেউই প্রবেশ করবে না।’ (সহিহ বুখারি)

রোজাদারের দুটি আনন্দঘন মুহূর্ত

রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি হলো, যখন সে ইফতার করে, তখন আনন্দিত হয়; অপরটি হলো, যখন সে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, তখন সে আনন্দিত হবে।’ (সহিহ মুসলিম )

রোজা স্বয়ং রোজাদারের জন্য সুপারিশকারী

কেয়ামতের দিন রোজা স্বয়ং রোজাদারের জন্য সুপারিশ করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সিয়াম এবং কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে।’ সিয়াম বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তাকে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। আর কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন।’ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অতএব, এদের উভয়ের সুপারিশ গৃহীত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ)

রোজার মাধ্যমে আগের সব গুনাহ মাফ

রোজা রাখার মাধ্যমে আগের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (সহিহ বুখারি) আল্লাহ সবাইকে রোজার পূর্ণ প্রতিদান অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা