সাতসতেরো

রমজানে আত্মপর্যালোচনা: এবাদত ভুলে ঈদের কেনাকাটা

আজ রমজান মাসের ২৪ তারিখ। আমলের বসন্তকালের বিদায়ের আবহ শুরু হয়েছে। আখেরাত বিশ্বাসী জান্নাত প্রত্যাশী মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে মাসব্যাপী সাধনার আত্মপর্যালোচনা নিয়ে। কোন কোন ইবাদাত কি পরিমাণ করার পরিকল্পনা ছিল, আর সে পরিকল্পনার কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, কতটুকু বাকি আছে। তারা হিসাব কষছে। আমলের হিসাব। কেননা, আমলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হয়ে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। হাতে আছে আর মাত্র কয়েকটা দিন। যা করার এর ভেতরেই করতে হবে। অল্প ইবাদাতে বেশি ছওয়াব লাভের সুযোগ শেষ হয়ে যাবে।

মহানবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তির নাক কাটা যাক যার নিকট আমার আলোচনা করা হল কিন্তু সে আমার উপর দরুদ পড়ল না। ঐ ব্যক্তির নাক কাটা যাক যে রমজান মাস পেল এবং মাস শেষ হলো কিন্তু তার গুনাহ ক্ষমা হল না। ঐ ব্যক্তির নাক কাটা যাক যে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে বার্ধক্যে পেয়েও জান্নাত লাভ করতে পারল না। (তিরমিযি: ৩৫৪৫)

একজন ঈমানদার বান্দার জন্য উক্ত হাদিসটি বেশ ভাবনার। রমজান মাস লাভ করার পরেও যদি কোন ব্যক্তি মাগফেরাত লাভ করতে না পারে, নিজের জীবনের গুনাহ মাফ করাতে না পারে, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে না পারে তাহলে তার পরিণতি কি হবে! মহানবী (স.) নিজের পবিত্র মুখে তার জন্য শক্ত কথা বলছেন। নাক কাটা যাওয়ার ব্যবহারিক অর্থ হল ভ্যাগ্য মন্দ হওয়া। আল্লাহর রসুল যদি কারো ব্যাপারে মন্তব্য করেন যে, তার ভাগ্য মন্দ হোক তবে এ মন্দ যে কত ভয়াবহ ও গভীর হবে তা কল্পনা করলেও ভয়ে শরীর শিহরিত হয়।

এখনো যে কয়দিন বাকি আছে, আমরা যদি সতর্ক হই, গুনাহ ছেড়ে দেই, বিশেষ করে চোখের, কানের ও জিহ্বার গুনাহ ছেড়ে দেই, হারাম সম্পদ আর হারাম ইনকাম সোর্স বিসর্জন দেই এবং অতীতের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ইফতারের সময়, সেহেরির সময় আল্লাহর কাছে মন থেকে মাফ চাই তবে দয়ালু প্রভু অবশ্যই আমাদের মাফ করবেন। আমাদের প্রতি সদয় হবেন।

মাগফেরাত লাভের জন্য রমজান শেষ দিনগুলোর প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাই। ঈদের কেনা-কাটায়, ঈদের প্রস্তুতে সময় কম দেই। ইবাদাতে সময় বেশি দেই। এমন যেন না হয় যে, ঈদের শপিং করার চাপে আসর-মাগরিব নামাজ কাজা। আমি যদি রমজান মাসকে ব্যবহার করে মাগফেরাত লাভ করতে না পারি তবে আর আমার ঈদ কিসের? প্রভুর মাগফেরাত বিহীন ঈদ সে তো ঈদ নয়, সে তো কান্না আর কান্না। রমজান শেষ হওয়ার পর সত্যিকার ঈদ তো তার হবে, নিখিল সৃষ্টিজগতের সুমহান অধিপতির দরবার থেকে যে ব্যক্তি মাগফিরাত পাবে।