সাতসতেরো

হিজরি সালের উৎপত্তি যেভাবে

১৪৪৩ হিজরি শেষ হয়ে শুরু হলো ১৪৪৪ হিজরি। হিজরি সাল চালু হওয়ার আগে আরবরা তাদের বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনার ওপর নির্ভর করে দিন গণনা করতেন। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) এর যুগে একটি নির্দিষ্ট তারিখ হিসাব করার দরকার হলে চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.) সহ কয়েকজন সাহাবির পরামর্শে একটি নির্দিষ্ট সাল গণনার পরামর্শ করা হয়।

আরও পড়ুন: স্বাগত ১৪৪৪

এতে কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্ম থেকে, কেউ তাঁর ওপর ওহি নাজিলের দিন থেকে, কেউ তাঁর ইন্তেকালের দিন থেকে সাল গণনার অভিমত দেন। কিন্তু উমর (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হিজরতের ঘটনা থেকে সাল গণনার প্রস্তাব করেন, এতে সাহাবিরা ঐক্যমত পোষণ করেন।

হজরত উমর (রা.) এর শাসনামলে তাঁর কাছে একটি চুক্তিপত্র আনা হয়। সেখানে হিজরি সালের অষ্টম মাস শাবান মাসের কথা উল্লেখ ছিল। তখন উমর (রা.) বললেন, এটা কি গত শাবান না আগামী শাবান মাস? এরপর তিনি তারিখ গণনার নির্দেশ দিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মদিনায় হিজরতকে কেন্দ্র করে হিজরি সাল গণনার সূচনা করেন। এ সময় মুহাররমকে প্রথম মাস হিসেবে গণ্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই হিজরত করেন। সেই দিনকে মুহাররম মাসের শুক্রবার হিসেবে ধরে হিজরি সাল গণনা শুরু হয়। হিজরি হিসাবের প্রথম প্রয়োগ ঘটে উমর (রা.) এর শাসনামলে ১৭ হিজরির ৩০ জুমাদাল উখরা অর্থাৎ ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই থেকে। এর ধারাবাহিকতায় আজও হিজরি সাল প্রচলিত রয়েছে। (সূত্র : আল-উকদুদ দিরায়া)

হিজরি সাল গণনার আগে আরবরা আরবি মাসগুলো ব্যবহার করতেন। অন্যান্য সব সালের মতো হিজরি সালেও ১২টি মাস রয়েছে। আল্লাহ তায়ালার কাছেও ১২ মাসে এক বছর। যেমন তিনি ঘোষণা করেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর কাছে গণনার মাস বারোটি, এর মধ্যে চারটি সম্মানিত। (সুরা তাওবা : ৩৬)। 

এ আয়াতের চারটি সম্মানিত মাসকে চিহ্নিত করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের সময় মিনা প্রান্তরে দাঁড়িয়ে বলেন, তিনটি মাস হলো জিলকদ, জিলহজ ও মুহাররম এবং অপরটি হলো রজব। (সূত্র: তাফসিরে ইবনে কাসির)

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম, পরিচালক, সম্পাদনা কেন্দ্র