সাতসতেরো

বাংলা গানের ‘শুকতারা’ শিল্পীর ৩৪তম প্রয়াণ দিবস

সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা- হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গেয়েছেন বলেই গানটি অমরত্ব পেয়েছে। এমন আরো অনেক গানে লেগে আছে তার কণ্ঠের মাধুরী। আর এসব গানের মধ্য দিয়ে আমাদের ভালোবাসার সুরের আকাশে তিনি ‘শুকতারা’ হয়ে জেগে রয়েছেন।

বাংলা গানের এই ‘শুকতারা’ শিল্পীর ৩৪ তম প্রয়াণ দিবস আজ।  ১৯৮৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কোলকাতায় মারা যান। অথচ মৃত্যুর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে তিনি ঢাকায় এসে ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে, আমি যদি আর নাই আসি হেথা ফিরে’ এই গানটি শুনিয়েছিলেন।  

‘এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনাতো মন’, ‘এই রাত তোমার আমার’, ‘আঁধারেরও আছে ভাষা’, ‘ও আকাশ সোনা সোনা’, `মুছে যাওয়া দিনগুলো’, `আজ দুজনার দুটি পথ’ এমন কালজয়ী অসংখ্য গান আজো তার কথা মনে করিয়ে দেয়। হেমন্তের কন্ঠে যখন বাজে তখনই বুঝতে পারা যায় তার কন্ঠের যাদু কতখানি। 

‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো’, ‘তুমি এলে অনেক দিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো’, ‘কেন দূরে থাকো শুধু আড়াল রাখো’, ‘রানার ছুটেছে’,  ‘আমার জীবনের এত খুশি এত হাসি’, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব’, ‘ও নদীরে, একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’, ‘বসে আছি পথ চেয়ে’, ‘আমি দূর হতে তোমারে দেখেছি’, ‘ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না’, ‘পৃথিবীর গান আকাশ কি মনে রাখে’, ‘যাবার আগে কিছু বলে গেলে না’, ‘আমি ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম’, ‘আয় খুকু আয়’, ‘তারপর, তার আর পর নেই’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘মেঘ কালো আকাশ কালো’, ‘কত দিন পরে এলে একটু বসো’, ‘এক গোছা রজনীগন্ধা হাতে দিয়ে বললাম’, ‘শোনো বন্ধু শোনো’, ‘যে বাঁশি ভেঙে গেছে’, ‘এই বালুকা বেলায় আমি লিখেছিনু’, ‘কোনো এক গাঁয়ের বধুর’, ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে’র মতো চিরায়ত গানগুলো কখনোই ভোলা যাবে না।

মুক্তিযুদ্ধের সময় হেমন্ত আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে গান করেছিলেন। তিনি সেসময় বিভিন্ন ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে ঘুরে বেড়াতেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, তিনি চ্যারিটি শো করে এর অর্থ তুলে দিয়েছিলেন উদ্বাস্তু শিবিরের সাহায্যার্থে। তার গাওয়া ‘মা গো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে’ গানটি দারুণভাবে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের। এজন্য এ শিল্পী বাংলাদেশের মানুষের মনে একটি আলাদা স্থান দখল করে রয়েছেন।

১৯২০ সালের ১৬ জুন ভারতের বারাণসীতে তার জন্ম। তিনি উত্তম কুমারের বাংলা সিনেমা ‘শাপমোচন’ এর সঙ্গীত পরিচালনা করেন। এই ছবিতে তিনি চারটি গান করেছিলেন। তারপর থেকে উত্তম কুমারের ছবি মানেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান-কথাটি সর্বজনীন কথায় পরিণত হয়। 

‘আমিও পথের মতো হারিয়ে যাবো, আমিও নদীর মতো আসবো না ফিরে আর আসবো না ফিরে কোনোদিন’-তার গাওয়া এই গানটির মতোই আর ফিরে আসবেন না সত্যি; কিন্তু প্রিয় গানগুলো আমাদের মাঝে ফিরে আসবে বারবার।