সাতসতেরো

ডলফিন দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র পাহাড়া

বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশের ক্ষমতার অন্যতম হাতিয়ার পারমাণবিক বোমা। সেগুলো সংরক্ষণের জন্য  আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা পদক্ষেপ নেয়। এ জন্য থাকে চরম সতর্কতা। যদিও মাত্র ৯টি দেশের রয়েছে পৃথিবী বিধ্বংসী এই অস্ত্র। এগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোপণ কৌশল ব্যবহার করে অনেক দেশ। সৈন্য কিংবা রোবট দিয়ে অনেক দেশ এসব অস্ত্র পাহাড়া দিলেও বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা পাহাড়া দেয় ডলফিন।

অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছু নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর রয়েছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডলফিন। এই ডলফিনদের দেওয়া হয় সৈনিকের সব ধরনের সুবিধা; এমনকি থাকার জন্য রয়েছে কোয়ার্টার! প্রশিক্ষিত ডলফিন জানে শত্রু প্রতিরোধের কৌশল। নৌবাহিনীর বিভিন্ন পদবিও দেওয়া হয় তাদের।

বিশ্বের অন্যতম সামরিক পরাশক্তির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ওয়াশিংটনের নৌবাহিনীর ঘাঁটি ‘Naval vase kitsap’- এ রয়েছে প্রায় দশ হাজার পারমাণবিক বোমা। একসঙ্গে এত পারমাণবিক বোমা বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই। সেনা-নৌবাহিনীর পাশাপাশি এই বোমা পাহাড়া দেওয়ার কাজ করছে ডলফিন। ২০১০ সাল থেকেই তারা দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করছে। এদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে ১৯৬৭ সালে। স্পেস অ্যান্ড নেভাল ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ইস্পাওয়ারের অধীনে ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট দিয়াগোতে চলে  প্রশিক্ষণ। বর্তমানে ৮৫টি ডলফিনের পাশাপাশি ৫০টি সি লায়নেরও প্রশিক্ষণ সেখানে চলছে। সাধরণত এদের কাজ হলো মাইন পরিষ্কার করা, মিত্র বাহিনীর নিরাপত্তা দেওয়া ও উদ্ধার অভিযান চালানো। সমুদ্রে মাইন শনাক্ত করাসহ নৌবাহিনীর নানান কাজে সাহায্য করে প্রশিক্ষিত ডলফিনগুলো।

সৈনিক ডলফিন যে কোনো বিপজ্জনক বস্তু চিহ্নিত করতে পারে। এদের রয়েছে পানির নিচে ভালোভাবে দেখার জন্য ইকোলোকেশন ব্যবহারের ক্ষমতা। প্রতিধ্বনির মাধ্যমে সাগরের গভীরে যে কোনো বস্তুর অবস্থান নির্ধারণের পদ্ধতি হলো সোনার টেকনোলজি। এই পদ্ধতি তারা ব্যবহার করে। 

পানির তলদেশই নয়, উপরের বিপজ্জনক বস্তুও তারা চিহ্নিত করতে পারে। সন্দেহজনক কিছু নজড়ে এলেই ডলফিন ছুটে যায় প্রশিক্ষকের কাছে। পানির উপরে রেখে আসে পরিচালকের দেওয়া বিশেষ বস্তু, যা জানিয়ে দেয় বিপদের স্থান। সেখানে গিয়ে বিপদ অপসারণ করে নৌবাহিনীর চৌকস দল।  এক প্রতিবেদনে মার্কিন নেভির মুখপাত্র ক্রিস হ্যালি বলেন, পরমাণু বোমা সব দিক থেকেই পাহারায় রাখতে হয়; এমনকি পানির নিচেও। এখানিই ডলফিন আর সি লায়নদের কাজ। ২০১০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু অস্ত্র পাহারা দিচ্ছে ডলফিন।  

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ভিয়েতনাম ও ইরাক যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী এই ডলফিন কাজে লাগিয়েছিল। বিশ্বের অন্যতম আরেক পরাশক্তি রাশিয়ারও রয়েছে প্রশিক্ষিত ডলফিন।