সাতসতেরো

ইফতার সংযমের অপূর্ব নিদর্শন

মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে সাধনা-পিয়াসী মুমিনদের জন্য বিশেষ উপঢৌকন হলো ইফতার; যা ইসলামের নিদর্শন, প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নাত ও দয়াময় স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। 

সিয়াম সাধনায় ইফতারের গুরুত্ব অপরিসীম। ইফতারে রয়েছে সংযম, প্রবৃত্তি দমন ও খোদাভীতি। সারাদিন সিয়াম সাধনায় রত থেকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ইফতার সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা কী যে আনন্দের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দুটি বিশেষ আনন্দের সময় রয়েছে, এক. ইফতারের সময়, দুই. মহান প্রভুর দীদার লাভের সময়। (বুখারী)

হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) নামায আদায়ের পূর্বে কয়েকটি ভেজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি ভেজা খেজুর না থাকত, তবে সাধারণ শুকনো খেজুরই গ্রহণ করতেন। যদি তাও না থাকত, তবে কয়েক ঢোক পানিই হতো তাঁর ইফতার (তিরমিযী) 

হযরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন, আমার তৃষ্ণা নিবৃত্ত হয়েছে, আমার শিরা-উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমার পুরস্কারও নির্ধারিত হয়েছে। (আবু দাউদ)

প্রিয় পাঠক! ইফতারের সময় হওয়া মাত্র দ্রুত ইফতার গ্রহণ করা সুন্নাত। প্রিয়নবী (সা.) অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে ইফতার গ্রহণ করতেন এবং ইফতারের সময় হলে দ্রুত ইফতার করতেন। নবী আদর্শের প্রতিচ্ছবি সাহাবায়ে কেরামও সর্বদা তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং দেরিতে সাহরি করতেন।

এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালবাসি যে ইফতারের সময় হওয়ার সাথে সাথেই ইফতার করে নেয়। (তিরমিযী) 

হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেন, মানুষ যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারী)

সারাদিন অভুক্ত থেকে ইফতার সামনে নিয়ে চোখের দু’ফোটা পানি ছেড়ে দিয়ে বান্দা যখন আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে, মহান আল্লাহ তা’আলা তখন তাঁর প্রিয় বান্দাকে রহমতের চাঁদরে আবৃত করে নেন, অপরাধসমূহ মার্জনা করেন এবং তার সকল ফরিয়াদ কবুল করে নেন।

নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, তিন ব্যক্তির দুআ কখনো প্রত্যাখ্যান করা হয় না। ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশার দুআ। ২. ইফতারের সময় রোজাদারের দুআ। ৩. মজলুমের দুআ। (তিরমিযী)

পবিত্র মাহে রমজানে রোজাদারকে ইফতার করানো একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল ও সাওয়াবের কাজ। প্রিয়নবী (সা.) রোজাদারকে ইফতার করানোর ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামদের উৎসাহিত করেছেন এবং একে ফজিলতময় ও সাওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছেন। এ ব্যাপারে বায়হাকী ও মেশকাত শরীফে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কেউ যদি মাহে রমজানে কোনো রোজাদারকে ইফতার করায় তাহলে ওই ইফতার করানোটা তার গুনাহ মাফের ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে এবং সে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে অথচ রোজাদারের সাওয়াব বিন্দুমাত্রও কমানো হবে না। 

সাহাবীগণ আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সবার তো আর রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই। প্রিয়নবী (সা.) বললেন, আল্লাহ তাকেও এই সাওয়াব দান করবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দ্বারাও ইফতার করাবে। আর যে তৃপ্তিসহকারে ইফতার করাবে, আল্লাহ তাকে হাউজে কাউসার থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন;  ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না।      লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক