সাতসতেরো

ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় জাহাজ সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয় কেন?

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মোখার তাণ্ডব এখন অনেকটাই কমে গেছে। গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী ঝড়টি দুর্বল হয়ে মিয়ানমারে আঘাত হেনেছে। এই ঝড় মোকাবিলায় সরকারসহ স্থানীয় প্রশাসনের ছিল ব্যাপক প্রস্তুতি। বিভিন্ন জায়গায় আবহাওয়া বুঝে সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। দেয়া হয়েছে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা। যেমন ঝড়ের পূর্বাভাসে বড় জাহাজগুলোকে সমুদ্রের মাঝে এবং ছোট নৌযানগুলোকে তীরের কাছে অবস্থান করতে বলা হয়েছিল।  

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগরে বড় জাহাজগুলোকে পাঠিয়ে দেয়ার ফলে বর্তমানে ৬২টি জাহাজ নিত্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল নিয়ে গভীর সাগরে ভাসছে। এর আগে ৪২টি পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরগুলোর বহির্নোঙরে অবস্থান করছিল। শুধু মোখা নয়, বিশ্বের যে কোনো দেশে বড় কোনো ঘূর্ণিঝড়ের সময় এভাবেই মাঝ সমুদ্রে পাঠিয়ে দেয়া হয় বড় জাহাজগুলোকে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক- বিপদ জেনেও কেন ঘূর্ণিঝড়ের সময় বড় জাহাজগুলো মাঝসাগরে পাঠানো হয়?

বিশেষজ্ঞদের মতে বন্দরের কোনো ক্ষতি যেন না হয় এজন্যই নেয়া হয় এমন ব্যবস্থা। বড় জাহাজগুলো তীরের কাছাকাছি থাকলে প্রচণ্ড বাতাসে ও তুফানে একটি আরেকটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে পারে কিংবা বড় জাহাজ ডুবে গেলে সেই জাহাজ না সরানো পর্যন্ত নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে পারে। ডুবে যাওয়া জাহাজ সরানো ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আবার পানি সরানোর সময় জাহাজের তলা ফেটে যাওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

আন্তর্জাতিক মেরিটাইম স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুযায়ী ল্যান্ড লক এরিয়া বা প্রাকৃতিকভাবে বেস্টিত সুরক্ষিত নৌবন্দর না থাকলে বিশ্বের সর্বত্র ঝড়ের সময় বড় জাহাজকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কারণ বড় জাহাজ গভীর সমুদ্রে নিরাপদ।

বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বের সব পণ্যপরিবাহী বড় জাহাজে দুটি ইঞ্জিন কার্যকর থাকে। দুই ইঞ্জিন চালিয়ে অনেক বড় বড় ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাহাজ চলতে পারে। আর ঝড়ের সময় জাহাজ একটি বিশেষ কৌশলে নির্দিষ্ট গতিতে চালিয়ে ভারসাম্য ঠিক রাখেন নাবিকরা। এতে ঝড়ের সময় বন্দরের চাইতে গভীর সমুদ্রেই নিরাপদে থাকে বড় জাহাজ। 

১৯৯১ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভেঙে যায় কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর মাঝখানের একটি বড় অংশ। জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেতুর ওই অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। এরপর থেকেই বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের সময় কঠিনভাবে মানা হয় এই নিয়ম।

২০১৭ সালেও ঘটেছিল এমন ঘটনা। সেবার ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রামের আনোয়ারা সৈকতে ক্রিস্টাল গোল্ড নামে একটি জাহাজ আটকা পড়ে। পরবর্তীতে সেটিকে আর সমুদ্রে নেয়া সম্ভব হয়নি। ১৯২ মিটার দৈর্ঘের এই জাহাজ দীর্ঘদিন সেখানে আটকে ছিল। ফলে প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গায় পলি জমে যায়। ২০২১ সালে জাহাজটি  কেটে ফেলা হয়।  

অনেকের মনে হতে পারে, এতে বড় জাহাজগুলোর প্রতি অমানবিকতা দেখানো হয়। আসলে তা নয়। বড় জাহাজগুলোর ভালোর জন্যই এ নির্দেশ দেয়া হয়। জাহাজ ও বন্দরের ক্ষতি কমাতেই নেয়া হয় এমন সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য যে, বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমে জানান (১৪ মে), দুর্ঘটনা এড়াতে বড় জাহাজগুলো সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সাগরে পাঠানো জাহাজগুলো যাতে সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন চালু রাখে এবং এক জাহাজ থেকে আরেক জাহাজ নির্ধারিত দূরত্বে নোঙর করে সে জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।