সাতসতেরো

রোজায় নফল নামাজে অভ্যস্ত হওয়ার মোক্ষম সুযোগ

ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামাজ। সকল ইবাদত আল্লাহ তা’আলা জীবরাঈল (আ.) এর মাধ্যমে নবীজী (সা.) দিয়েছেন।

কিন্তু নামাজ এমন এক ইবাদত যা আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) কে মেরাজের রজনীতে সাত আসমান ভেদ করে তাঁর দরবারে নিয়ে ফরয নামাজের বিধান দিয়েছেন। এতে এর গুরুত্ব ও মর্যাদা উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা নামাজের ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন: অর্থাৎ-‘তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আনুগত্য কর রাসূলের, যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হতে পারো। (সূরা নূর: ৫৬) প্রকৃত সফল মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: অর্থাৎ- ‘মুমীনগণ সফল হয়েছে। যারা নামাজে একনিষ্ঠ ও বিনয়াবনত’।

(সূরা মুমীনুন: ১-২) অন্যত্র আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা দিয়েছেন, কুরআন যাদেরকে হিদায়েত করবে তাদের মধ্যে দ্বিতীয় হলো নামাজ আদায়কারী। তিনি এরশাদ করেন: অর্থাৎ: ‘এই সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই। পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগারদের জন্য যারা ঈমানের অদৃশ্য বিষয়াবলীতে বিশ্বাস করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা বাকারা: ২-৩)

নামাজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘ফরয’ নামাজ। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত হলো ফরয নামাজ। এরপর ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদা। এসব নামাজ হলো মহান রবের পক্ষ থেকে মূল দায়িত্ব। এগুলোতে ত্রুটি হলে শাস্তি অনিবার্য।

এর পাশাপাশি আল্লাহর নৈকট্ট অর্জন করার জন্য হলো ‘নফল’ নামাজ। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবীগণ, আল্লাহর সকল প্রিয় বান্দা-বান্দীগণ নফল নামাজের প্রতি যারপরনাই গুরুত্বারোপ করে গেছেন। হাদীসে এসেছে, নবীজী (সা.) রাতভর দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে নফল নামাজ পড়তে পড়তে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। মদিনার প্রতিটি ওলিগলিতে হাঁটলে সারা রাত নফল নামাজে কুরআন তিলাওয়াতের গুনগুন আওয়াজ শোনা যেত।

নফল নামাজ দ্বারা ফরয নামাজের ‘ফরয’ ও ‘ওয়াজিব’ ব্যতীত অনাকাঙ্খিতভাবে হয়ে যাওয়া ত্রুটিসমূহের ক্ষতিপূরণের কাজ হয়। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে: হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিবসে মানুষের আমলসমূহের মধ্যে প্রথমে তাদের নামাজের হিসাব নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমার পরাক্রমশালী প্রভূ জানা সত্ত্বেও ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, দেখতো সে কি ফরয নামাজ পূর্ণরূপে আদায় করেছে নাকি তাতে কিছু ত্রুটি আছে? অতঃপর বান্দার নামাজ পরিপূর্ণ হলে তা সেভাবেই লেখা হবে। তাতে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে তখন আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখতো আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি? যদি থাকে তবে তিনি বলবেন, তোমরা তার নফল নামাজ দ্বারা ফরজ নামাজের ত্রুটি পূরণ কর। অতঃপর এভাবে মানুষের সকল ফরয আমলের ত্রুটি নফল ইবাদত দ্বারা পরিপূর্ণ করা হবে। (আবু দাউদ: ৮৬৪) 

নফল নামাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো: ১. তাহাজ্জুদের নামাজ ২. ইশরাকের নামজ ৩. চাশতের নামাজ ৪. আউয়াবিন ৫. সালাতুল ইস্তেখারা ৬. সালাতুল হাজাত ৭. তাহিয়্যাতুল ওজু ৮. দুখুলুল মাসজিদ ৯. সালাতুশ শোকর ইত্যাদি।

মাহে রমজানে এই নফল নামাজগুলোতে অভ্যস্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায়। যাদের নফল নামাজে অভ্যাস নেই তারা যদি এ মাসে অভ্যাস করে নিতে পারি তাহলে অন্যান্য মাসেও নফলগুলো পালন করে আল্লাহর নৈকট্ট অর্জন করা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ।