সাতসতেরো

 ইবাদতে ঝাঁপিয়ে পড়ার এখনই সময়

রমজানুল মোবারক আল্লাহ তা’আলা বান্দার জন্য নেয়ামত হিসেবে দান করেছেন। এই মাসের দিন-রাত মহান আল্লাহ খায়ের-বরকত দিয়ে পরিপূর্ণ করে রেখেছেন। মুমিনের জন্য রমজান মাস গোটা বছরের আত্মিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র। একটি মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সে গোটা বছরের ঈমানী প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

হাদিসের ভাষায় মুমিনদের জন্য এই মাসের চেয়ে উত্তম মাস আর নেই।  ‘মুনাফিকদের জন্য এরচেয়ে ক্ষতির মাসও আর নেই। এই মাস মুমিনদের জন্য গণিমত এবং মুনাফিকদের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমাদ:২/৩৩০)

রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার হুকুমে জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়, জান্নাতকে সুসজ্জিত করা হয় এবং সাথে সাথে জাহান্নামের সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। জ্বিন-শয়তানকে বন্দি করা হয়। রমজানের শুরুতেই আল্লাহ ত’আলার পক্ষ থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করতে থাকেন: ‘ওহে! কল্যাণ অন্বেষণকারী! অগ্রসর হও। ওহে! অকল্যাণের পথিক! থেমে যাও।’

এই ঘোষণার কারণে রমজান মাসে ভালো কাজের দিকে আমাদের আগ্রহ থাকে এবং খারাপ কাজ থেকে ফিরে থাকার শক্তি সঞ্চয় হয়। হাদিসের পরিভাষায় এটিকে ঢাল বলা হয়েছে।

সৌভাগ্যবান ওইসব ব্যক্তি যারা এই আসমানী প্রেরণাকে মূল্য দেয় এবং হিম্মতের সঙ্গে কর্মের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রমজানকে আখেরাতের তেজারাতের সাথেও সাদৃশ্য করা হয়েছে। আর এই তেজারত  বা ব্যবসা আল্লার সাথে বান্দার হয়। এই ব্যবসার পণ্য হচ্ছে ইখলাসভিত্তিক সিয়াম সাধনা। এর বিনিময়ে আল্লাহর তা’য়ালার কাছ থেকে বান্দার প্রাপ্তি হচ্ছে তার সন্তুষ্টি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ। এ কারণেই আল্লাহতালা এরশাদ করেছেন: ‘ওহে! মোমেনগণ! তোমাদের উপরে রোজা ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যেমনটি পূর্বের উম্মতদের ওপরেও ফরজ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা আয়াত নং ১৮৩)

আর এই মুত্তাকি হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে তাকওয়া বা নিজের মধ্যে আল্লাহর ভয় তৈরি করা। যার মধ্যে আল্লাহর ভয় আছে সে কোনো ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে না। রমজানের পুরো একটি মাস ইবাদত-বন্দেগি এবং সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জনের অপূর্ব সুযোগ রয়েছে বান্দার কাছে। অথচ আমাদের অনেকেই রোজার পূর্ণ হক আদায় করতে না পারায় তাকওয়া অর্জন করতে ব্যর্থ হই। বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকের যে অবস্থা আমাদের সমাজে পরিলক্ষিত হয় তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বহু মানুষকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই সময়ে মার্কেটে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। তাদের না থাকে ফরজ নামাজ জামাতের সাথে পড়ার এহতেমাম, না তারাবির নামাজের জামাতে উপস্থিতি। কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ আর দোয়া কান্নাকাটিরতো প্রশ্নই আসে না। ঈদ উদযাপনের নামে সারা বছরের ফরজ হুকুম পর্দার খেলাফ করা হয় পুরোদমে। একজন মুসলমানের এ ধরনের কর্মকাণ্ড রমজানের বাইরে অন্যায় তো বটেই, রমজানের মধ্যে তা আরও বড় অন্যায় হিসাবে আমলনামায় লেখা হয়।

রমজানের বিধি-বিধান সঠিকভাবে পালন না করতে পারায় এর প্রভাব পড়ে আমাদের বাকি ১১ মাসের জীবনে। যে ব্যক্তি রমজানে পবিত্রতা অর্জন করতে সক্ষম হলো, বাকি ১১ মাস এর প্রতিক্রিয়ায় সে পবিত্র জীবনযাপনে সক্ষম হবে। যাকে রোজা গুনাহ থেকে বাঁচাবে, নেক আমলের সাথে তাকে জড়িয়ে দিবে, বুঝতে হবে তার রোজা ঢালের ন্যায় কাজ করছে।

ইতিমধ্যে রমজানের ১০টি দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। বাকী দিনগুলো যাতে হেলায়-ফেলায় হারিয়ে না যায় সেজন্য এখনই পরিপূর্ণভাবে আমাদের তাওবা করে ইবাদতের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। অন্ততপক্ষে ফরজ নামাজগুলো জামাতের সাথে আদায় এবং তারাবির সালাত পূর্ণভাবে আদায় শুরু করা উচিত। এর পাশপাশি কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, তাজবিহ-এর পাবন্দি খুব বেশি করা উচিত। সেহরির গুরুত্ব যেহেতু রয়েছে সেহেতু সেহরি খাওয়া এবং তাহাজ্জুদের জন্য কিছু সময় বের করা উচিত।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাকেই মাহে রমজানের বরকত নসিব করুন এবং এমনভাবে রোজা পালন করার তৌফিক দান করুন যেন রোজা আমাদের জন্য রক্ষাকবচ হয়‌। আমিন।